ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

সাতক্ষীরায় শরিকের চাপে অস্বস্তিতে আ’লীগ-বিএনপি

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৮
সাতক্ষীরায় শরিকের চাপে অস্বস্তিতে আ’লীগ-বিএনপি সাতক্ষীরার চারটি আসন থেকে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একাংশ। ছবি-সংগৃহীত

সাতক্ষীরা: জাতীয় সংসদের ১০৫, ১০৬, ১০৭ ও ১০৮ নম্বর আসন চারটি সাতক্ষীরার। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় এ জেলার চারটি আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশ আগে থেকেই নিজ নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ শুরু করেছেন।

এরই অংশ হিসেবে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের উঠান বৈঠক, সভা, সমাবেশ, মিছিল ও মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করতে দেখা গেছে। অপরদিকে, নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেওয়ায় নড়ে চড়ে বসতে শুরু করেছে বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সদ্য নিবন্ধন বাতিল হওয়া শরিক জামায়াতও।

তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তলে তলে সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

তবে, এই মুহূর্তে জেলাবাসীর কাছে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় শরিকদের জন্য সাতক্ষীরার কোন কোন আসন ছাড় দিতে বাধ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কারণ সাতক্ষীরার চারটি আসনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যেমন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে, তেমনি শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে তাদের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি ও জাসদেরও।

ঠিক একইভাবে আসনগুলোতে বিএনপির যেমন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে, তেমনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতেরও রয়েছে শক্তিশালী প্রার্থী।  

তাই আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিরাজ করছে অস্থিরতা। ইতোমধ্যে এই অস্থিরতা ক্ষোভে রূপ নিয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তালার পাটকেলঘাটায় ও কলারোয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশও করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সব মিলিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে সাতক্ষীরার চারটি আসনে শরিকদের বেশ চাপেই রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

সাতক্ষীরা-১ (জাতীয় সংসদ-১০৫): জেলার তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে প্রার্থীর যেমন ছড়াছড়ি রয়েছে, তেমনি বিএনপি ও জামায়াতেরও রয়েছে শক্তিশালী প্রার্থী।

চার লাখ ২২ হাজার ৮৯৮ জন ভোটারের এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ১৪ দলের মনোনয়ন নিয়ে অংশ নিতে চান একাদশ সংসদ নির্বাচনে। তবে, আসনটি দলীয়ভাবে ফিরে পেতে চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় এ আসনে গণসংযোগ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল হক, কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপনসহ আরও অনেকে।

তবে, শুধু ওয়ার্কার্স পার্টি নয়, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সাতক্ষীরা-১ আসনের দিকে নজর রয়েছে জাতীয় পার্টি বা জাসদেরও। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তথ্য উপদেষ্টা সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত ও জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ওবায়দুস সুলতান বাবলুও মহাজোটের মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন মাঠে। এ আসনটি কোনভাবেই ছাড়তে চায় না জাতীয় পার্টি।

এদিকে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চান, শরীক নয়- সাতক্ষীরা-১ আসনে সরাসরি আওয়ামী লীগের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। যদিও সেক্ষেত্রে রয়েছে বিপত্তি। কারণ জোটগত নির্বাচনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি যে কয়টি আসন ভাগ পাবে- সে কয়টি আসনে প্রার্থী মনোনয়নে দলটিতে এগিয়ে আছেন অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।  

আবার, জাতীয় পার্টি নেতা সৈয়দ দিদার বখতও দলীয়ভাবে শক্ত প্রার্থী। তাই সাতক্ষীরা-১ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অস্বস্তিতেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।  

এদিকে, গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তালা উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মেলনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় বর্তমান এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহর নাম ঘোষণা করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বিক্ষোভ সমাবেশে।  

তাই আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের সব দলেই চলছে জল্পনা কল্পনা। কে পাচ্ছেন মনোনয়ন তা নিয়ে রীতিমতো চায়ের কাপে ঝড় উঠছে সাতক্ষীরা-১ নির্বাচনী আসনের অলিতে-গলিতে।  

এদিকে, বিএনপি নির্বাচনে আসলে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবই যে সাতক্ষীরা-১ আসনে দলটির প্রার্থী হবেন- এমন বিশ্বাস তৃণমূল নেতাকর্মীদের। ইতোমধ্যে মনোনয়ন পত্রও কিনেছেন তিনি। যদিও সেখানে তাদের শরিক জামায়াতেরও শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। এ আসনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্যাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চান। তাই বিএনপিও প্রার্থী মনোনয়নে থাকবে চাপে।  

সাতক্ষীরা-২ (জাতীয় সংসদ-১০৬): সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-২ আসন। জেলা সদরের এই আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫৬ হাজার ১৮৪। এই আসনে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। তবে, জাতীয় পার্টি যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় তবে, এই আসনে কোন দল থেকে মহাজোটের মনোনয়ন দেওয়া হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই খোদ আওয়ামী লীগেই।

সাতক্ষীরা-২ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণসংযোগ করছেন ও দলীয় মনোনয়ন পত্র কিনেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু।

তবে, প্রথম থেকে মাঠে দেখা না গেলেও সম্প্রতি জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে নির্বাচনী এলাকায় শো ডাউন করেছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন। সংগ্রহ করেছেন দলীয় মনোনয়ন পত্র। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দলটি সম্প্রতি যৌথ সভাও করেছে। আর হঠাৎ নির্বাচনী মাঠে জাতীয় পার্টির কর্ম তৎপরতা নতুন করে ভাবাচ্ছে নির্বাচনী বিশ্লেষকদের।  

যদিও সাতক্ষীরা-২ আসনে প্রায় ৪২ বছর পর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জয় হওয়ায় ফের আসনটি পেতে চায় আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।  

এদিকে, মাঠে না নামলেও সাতক্ষীরা-২ আসনে বিএনপি-জামায়াতের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে।  

এদের মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি রহমাতউল্লাহ পলাশ, সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান, আলিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ উল্লেখযোগ্য।  

তবে, সাতক্ষীরা-২ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা বিভাগের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। বর্তমানে তিনি জেলে থাকলেও দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছে তার নাম। আর তাই এ আসনেও প্রার্থী মনোনয়নে বিএনপিকে কিছুটা হলেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে। থাকতে হবে চাপে।  

এদিকে, ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং শুরু করেছেন গণফোরামের জেলা সম্পাদক আলী নুর খান বাবুল। তিনিও দলীয় মনোনয়ন পত্র কিনেছেন।  

সাতক্ষীরা-৩ (জাতীয় সংসদ-১০৭): জেলার দেবহাটা, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ (আংশিক) উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮। সাতক্ষীরা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণসংযোগ করলেও এ আসনে মহাজোটের শরিকের চাপ কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় কাজ করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহম্মেদ ও নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ। এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট স ম সালাউদ্দিন মহাজোটের মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে দলীয় সূত্র জানালেও তিনি রয়েছেন নির্বাচনী মাঠের বাইরে। তাই সাতক্ষীরা-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে অন্যান্য আসনের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।  

অপরদিকে, সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও এ আসনে প্রার্থী মনোনয়নে জটিলতা পোহাতে হবে দলটিকে। কেননা এই আসনে তাদের শরিক জামায়াতের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে।

সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও বিএনপি সমর্থিত ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ডা. শহিদুল আলম। আর তার বিপরীতে সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চান নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের জেলা আমির মাওলানা রবিউল বাসার।  

তাই প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে উভয় দলের নেতাকর্মীরা রয়েছেন অস্বস্তিতে। বিশেষ করে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা রয়েছেন এই চিন্তায় যে এই আসনটিও শরিকের জন্য ছেড়ে দিতে না হয়।  

সাতক্ষীরা-৪ (জাতীয় সংসদ-১০৮): জেলার শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৯৩ হাজার ৪৭৯। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের একাধিক প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও এই আসনে প্রত্যেক দলের একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী নিজ নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী, সাবেক এমপি এইচ এম গোলাম রেজার নাম।  

স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, সাতক্ষীরা-৪ আসনের হিসাব-নিকাশ সাতক্ষীরা-১ আসনের মতোই জটিল। এই আসনেও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে প্রার্থী মনোনয়নে বেশ চাপে থাকতে হবে।

সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত ছয়জন প্রার্থী কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় সভা-সমাবেশ-উঠান বৈঠক-মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও সরকারের উন্নয়ন সম্বলিত লিফলেট প্রচারের মাধ্যমে গণসংযোগ করছেন।  

অপরদিকে, সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।  

তাই এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের ঘুম হারাম হতে চলেছে। কেননা আসনটি আওয়ামী লীগের কাছে মহাজোটগতভাবে চায় জাতীয় পার্টি। আর সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ। যদিও আগে থেকেই এই আসনে মনোনয়ন চায় জাসদের (ইনু) নেতা অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী।  

নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিতে পারেন। আর তা হলে পাল্টে যেতে পারে দৃশ্যপট। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ডিঙিয়ে আসনটি চলে যেতে পারে বিকল্প ধারার ঘরে। যদিও জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সাতক্ষীরা-৪ আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করায় রাজনৈতিক সমীকরণে দেখা দিয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশ।  

অনেকেই মনে করছেন, এইচ এম গোলাম রেজা সাতক্ষীরা-৪ আসনে বিকল্পধারার হয়ে মনোনয়ন পেতে পারেন- তাই ক্ষিপ্ত হয়েই এই আসনে নির্বাচন করতে চাইছেন জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।  

এদিকে, সাতক্ষীরা-৪ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের দু’জন সম্ভাব্য প্রার্থীর দু’জনই সাবেক সংসদ সদস্য। তাই মনোনয়ন কাকে দেওয়া হবে- তা নিয়ে রীতিমত দল দু’টির মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।  

দলীয় সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স ম জগলুল হায়দার, কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী, শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিউল আযম লেলিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুদা খানম মেধা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আতাউর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় গণসংযোগ করছেন।  

অপরদিকে, সাতক্ষীরা-৪ আসনে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় সাংগঠনিক তৎপরতা ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বিএনপির জতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন ও ২০ দলীয় জোটের শরিক, সদ্য নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম।  

এদিকে, সম্প্রতি আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসনের মানুষকে নতুন করে ভাবাচ্ছে জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য এইচ এম গোলাম রেজার বিকল্প ধারায় যোগদান। যা সাতক্ষীরা-৪ আসনের নির্বাচনী সমীকরণকে জটিল করে তুলেছে।  

তবে, সর্বশেষ বুধবার জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সাতক্ষীরা-৪ আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করায় সব হিসাব-নিকাশই নতুন করে ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।  

সবমিলিয়ে সাতক্ষীরার চারটি আসনের মধ্যে কয়টিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন পাচ্ছেন- আর কোন কোন আসন শরিকের জন্য ছেড়ে দিতে হচ্ছে তা নিয়ে বেশ চিন্তিত দল দু’টির নেতাকর্মীরাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।