ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

দুর্দিন যাচ্ছে চাতাল মালিকদের

শামীম হোসেন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৭
দুর্দিন যাচ্ছে চাতাল মালিকদের ফুলবাড়ীর চাতাল মালিক হাবিবুর রহমান। ছবি: শামীম হোসেন

কুড়িগ্রাম থেকে: কুড়িগ্রামের উত্তর পূর্বের উপজেলা ফুলবাড়ী। এ উপজেলার অর্থনীতি পুরোটাই কৃষি নির্ভর। এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে ধান, গম, ভুট্টা, পাট এবং সরিষা অন্যতম। 

এ উপজেলায় ছোট-বড় মোট ৩২টি চালের কল বা চাতাল রয়েছে। দেশের অন্যান্য চাতালের মতো এখান থেকেও সরকার নির্ধারিত দামে চাল সংগ্রহ করে থাকে।

তবে সরকার নির্ধারিত দামের সঙ্গে বাজার মূল্যের পার্থক্য থাকায় অনেক চাতাল মালিকই খাদ্য গুদামে চাল দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

এ এলাকার চাতাল মালিকরা জানিয়েছেন, এক সময় এ উপজেলা থেকে ২ হাজার টন চাল সংগ্রহ করা হতো। তবে এ পরিমাণ কমে গিয়ে এখন ২৫০-৩০০ টনে নেমে এসেছে। এতে অনেকটাই দিশেহারা চাতাল মালিকরা। এ জন্য অনেক চাতাল মালিকই চুক্তি করছেন না। আর যারা চুক্তি করেছেন তাদের অনেকে চাল দেয়নি। সেজন্য তাদের ব্যাংক ড্রাফট আর ফেরত পাচ্ছেন না।  

কথা হচ্ছিল ফুলবাড়ী উপজেলার খড়িবাড়ী এলাকার চাতাল মালিক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন করছে, এটা ঠিক। তবে এর সুফল নিচ্ছে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় যারা থাকেন তারা। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা। আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঠে মারা অবস্থা। ব্যবসায়ীরা দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে।

হাবিবুর বলেন, আমরা এমন অবস্থায় পৌঁছেছি যে, মিল-চাতাল এখন বেচে খেতে হবে। সরকার এবার যে দামে বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করতেছে তাতে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। প্রতি কেজিতে ৫ টাকা করে ভতুর্কি দিতে হবে। এ ভতুর্কি দিতে হলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

‘প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন ফি লাগছে ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য সরকারি ট্যাক্স, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী মজুরি ইত্যাদি খরচ তো আছেই। এসব দিয়ে যদি লাভ না করতে পারি তাহলে আমরা বাঁচবো কী করে। ব্যবসা টিকবে কী করে। ’

হাবিবুর রহমান আরও জানান, যেখানে আগে এক একটি মিল থেকে সরকার ১০০-২০০ টন পর্যন্ত চাল সংগ্রহ করতো, সেখানে মাত্র ৫ টন নিচ্ছে। এ সামান্য পরিমাণ চালের জন্য চাতালের চুলা জ্বালিয়ে শ্রমিকের খরচ দিয়ে পোষানো যায় না। এছাড়া এতো অল্প কাজের জন্য শ্রমিকও পাওয়া মুশকিল। সেজন্য কোনো কোনো চাতাল মালিক বাধ্য হয়ে অন্য কল থেকে চাল সংগ্রহ করে কোনো রকমে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।

তিনি বলেন, ফুলবাড়ীর প্রায় সবগুলো চাতাল এখন বন্ধ। শুলু মো. আলীর চাতাল কোনো রকমে টিকে আছে। তাও বহু কৌশল করে টিকে থাকতে হচ্ছে তাদের। ব্যবসায় মন্দার কারণে অনেকে মিল ব্যবসা বাদ দিয়ে অন্য ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছে। আমি নিজেও হলুদ-মরিচ ও সরিষার মিল দিয়েছি।  

সরকার চাহিদা মতো চাল নিচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার আমাদের থেকে চাল না নিয়ে ভারত থেকে আনছে। এজন্য যেখানে আগে ১০০ টন চাল নিতো সেখানে নিচ্ছে ৫ টন।  

হাবিবুর রহমান জানান, তার মোট ৬টি লাইসেন্স রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসার। এর মধ্যে চাল কল, খাদ্য গুদাম, বিশুদ্ধ খাদ্য উৎপাদনসহ মোট ৬টি লাইসেন্সের জন্য বছরে এক লাখ টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। এসব ট্যাক্স দিতে হলে সে অনুযায়ী আয়ও থাকতে হয়। তার ওপর আবার ব্যাংকের লোন আছে, সেখানে ইন্টারেস্ট দিতে হয়।  

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কর্মচারী না রাখতে পেরে আমার শিক্ষত দুই ছেলেকে মিলে কাজে লাগিয়েছি। অন্য এক ছেলেকে ঢাকায় পড়াচ্ছি। তার জন্য মাসে মাসে টাকা পাঠাতে হয়। ব্যবসা যদি ভাল না থাকে তাহলে টাকা দেবো কী করে।

এ এলাকার অন্যান্য চাতালগুলোরও একই অবস্থা জানিয়ে হাবিবুর বলেন, আমাদের লাইসেন্সগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে লোকজন এসে ইনকোয়ারি করে। লাইসেন্স আছি কি না, নবায়ন করা হইছে কি না। আমাদের চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি আলী হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেনের মিলেরও একই অবস্থা। সব চাতালই পড়ে আছে, নষ্ট হচ্ছে।

এলাকার চাতাল মালিকদের অনুরোধ,  মিল মালিক-শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে সরকার যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, যাতে চাতাল মালিকরা এ ব্যবসায় টিকে থাকতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৭
এসএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।