ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কমলগঞ্জে টমেটো চাষে বদলে যাচ্ছে কৃষকের দিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
কমলগঞ্জে টমেটো চাষে বদলে যাচ্ছে কৃষকের দিন টমেটো খেতে কাজ করছেন চাষী ও শ্রমিকেরা; ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষক আব্দুল হামিদ টমেটো চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাকে অনুসরণ করে আরও ১০/১২ জন টমেটো চাষে এগিয়ে এসেছেন। খরচ যা হবে তার দ্বিগুণের বেশি লাভের আশা করছেন কৃষকরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাথরখলা বাগানের বালুঝিল এলাকায় পা রাখলেই চোখে পড়বে চিকন বাঁশের কঞ্চির আড়ালে সবুজ গাছের সমারোহ। একটু এগিয়ে কাছে গেলে দেখা যাবে টমেটোর সবুজ গাছে ফুল ও ফল ধরতে শুরু করেছে।

বছরে চার বার গাছ থেকে টমেটো তোলা হবে।

কৃষকরা জানান, চৈত্র মাস থেকে শুরু হয়ে যায় বীজ বপন বা চারা লাগানো। আবার কখনো কখনো আরও পরে অর্থাৎ আষাঢ় মাস থেকে। আর ভাদ্র মাসে ফল বিক্রি শুরু হয়। বীজ বপন বা চারা লাগানোর দু’মাসের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। আগাম টমেটো চাষ করলে অধিক দামে বিক্রি করা যায় বলে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ লাভের মুখ দেখেন।

তবে টমেটো গাছের রোগব্যাধি কৃষকদের বেশ ভোগাচ্ছে। কোনও কোনও গাছ লাল হয়ে কুঁকড়ে গেছে আবার কোনও গাছের কচি টমেটোগুলোতে নিচে থেকে পচন ধরা শুরু করেছে। আবার কোনও কোনও গাছে প্রচুর টমেটো ধরেছে। আর আধা পাকা টমেটোর ভারে গাছ নুয়ে পড়ছে। পচন রোগ ও  গাছ-মরা রোগে দিশেহারা কৃষকেরা। অথচ নেই কৃষি বিভাগের তদারকি।

টমেটো খেতের কাছে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে অনেক লোক কাজ করছে। কেউবা সুতো দিয়ে গাছগুলো বাঁধছে। কেউ ঘাস পরিষ্কার করছে। কেউ আবার ওষুষধ ছিটাচ্ছে। এখানকার টমেটোর খেতগুলোতে শিশুসহ ৭০-৮০ জন লোক নিয়মিত কাজ করে। তবে ফসল তোলার সময় কাজ করে প্রায় দেড়শ লোক।

জমির মালিকদের কাছ থেকে চুক্তির ভিত্তিতে জমি নিয়ে চাষ করছেন অনেক টমেটোচাষী। জমির মালিকদের মধ্যে কয়েকজন হচ্ছেন বিশ্বনাথ, নিমাই, হরিদাস, ফুল মিয়াসহ অনেকে। জায়গাটা উঁচু বলে টমেটোর চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত জায়গা। এখানকার সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে জায়গা নিয়ে চাষ করেন আব্দুল হামিদ নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন আদমপুরের বনগাঁও গ্রামে। তিনি ওই এলাকার কাদির খানের ছেলে।

দেখা যায়, টমেটো খেতে কাজ করছে ৭ম শ্রেণীতে পড়–য়া হৃদয় দাস ও সাজু মিয়াকে। বাংলানিউজকে তারা বলে, কখনো কখনো স্কুল বাদ দিয়ে ১ শ টাকা মজুরিতে তারা টমেটোর খেতে কাজ করে। এরা ছাড়াও সেখানে ফজল মিয়া, কালাম মিয়া, মানিক চাঁদসহ কয়েকজন শিশুশ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেল।
শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের শ্রমিক সুমন দাস বাংলানিউজকে জানায়, বাগানে কাজ না থাকায় ২শ টাকা মজুরিতে এখানে সে কাজ করছে।

টমেটো খেতে কাজ করেন মুজেফফর। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তিনি ৫ বছর ধরে টমেটো খেতে দৈনিক ৩শ টাকা মজুরিতে কাজ করে সংসার চালান।

খেতে গিয়ে দেখা গেল টমেটোচাষী হামিদ আপন মনে টমেটোগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত। সাংবাদিক শুনে এগিয়ে আসেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ২০১২ সালে প্রথমে এক একর জায়গা লিজ নিয়ে টমেটো চাষ শুরু করেন। সে বছর ১ লক্ষ টাকা খরচ করে লাভ হয় ২ লক্ষ টাকা। সেই থেকে প্রতি বছর টমেটো চাষ করে যাচ্ছেন। তার সাফল্যের কথা  শুনে এলাকার আরও ১০/১২ জন টমেটো চাষে এগিয়ে এসেছেন। এখন তারা সবাই মিলে ১৫ একর জায়গাতে টমেটো চাষ করছেন।

হামিদ আরও জানান, এ বছর তিনি ২ একর জমিতে টমেটো চাষ করছেন। তার খরচ হবে ৬ লক্ষ টাকা। টমেটো বিক্রী করবেন ১৫ লক্ষ টাকার। খরচ বাদে তার লাভ হবে ৮ থেকে ৯ লক্ষ টাকা।

তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের ব্যাপারে অভিযোগের অন্ত নেই তার। জানালেন, গত ৫ বছরে একদিনের জন্যও কোনও কৃষি কর্মকর্তা তাদের এখানে আসেননি। কৃষি কর্মকর্তারা যদি তাদের সঠিক পরামর্শ দিতেন তবে গাছ বা ফলন নষ্ট হতো না। তাদের ফলন আরও বেশি হতো, লাভও বেশি হতো।

রোগ বালাই হলেও অতিরিক্ত কীটনাশক তিনি টমেটোগাছে বা টমোটোতে দেন না। অনেক শিক্ষিত ছেলে চাকরি পাচ্ছে না। তারা যদি চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজে এগিয়ে আসে, তবে দেশের কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। সেইসঙ্গে নিজেরাও স্বনির্ভর হতে পারবে।

হামিদ ছাড়াও এখানকার অন্যসব টমেটোচাষী হলেন নাজমুল মিয়া,মান্নান মিয়া, আব্দুস ছালাম, রেজ্জাক মিয়া, জয়নাল মিয়া, হুরমান মিয়া, কুদ্দুছ মিয়া, আবু তাহের, মৃণাল, ছায়েদ, সবুজ, নওশাদ ও সাবেক ইউপি সদস্য বীরবল প্রসাদ পাল।

বীরবল প্রসাদ পাল বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হামিদকে দেখে তারও টমেটো চাষের ইচ্ছা জাগে। তুলনামূলক কম কষ্ট করে অধিক ফলন ও লাভ পাওয়া যায় বলে তারা টমেটো চাষ করছেন। টমেটোর লাভে এখন তাদের পরিবার ভালই চলছে। পাশাপাশি অন্য অনেকের কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে।

এব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামছুদ্দিন আহমদের কাছে টমেটো চাষীদের পাশে না দাঁড়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এবিষযে তার জানা ছিল না। মঙ্গলবার বিকেলেই তিনি টমেটো চাষের এলাকাটা ঘুরে দেখবেন। টমেটো চাষীদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশ সময়:১১৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
এমএএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।