ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বেগুনি ফুলের থোকায় স্বপ্ন বুনছেন চাষি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
বেগুনি ফুলের থোকায় স্বপ্ন বুনছেন চাষি থোকা ধরা শিম ও ফুল। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: ছোট ছোট বেগুনি ফুল আর থোকা থোকা শিমে ভরে উঠেছে লালমনিরহাটের সবজি চাষিদের শিমের বাগান। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে।

অল্প জমিতে স্বল্প পুঁজি দিয়েই শিম চাষে বেশ লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে আর তাই প্রতিবছর বাড়ছে শিমের চাষ।  

আষাঢ় মাসের শেষদিকে সারিবদ্ধভাবে গর্ত খুঁড়ে কিছু গোবর সার প্রয়োগ করে শিমের বীজ বপন করতে হয়।

এরপর কিছুদিন সার সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে পরিচর্যা করে চারা গাছ একটু বড় হলে মাচাং বানিয়ে দিলে মাত্র আড়াই/তিন মাসের মধ্যেই বাজারে তোলার উপযোগী হয়ে ওঠে শিম। শীতকালীন সবজি হিসেবে শিমের কদর থাকায় মুনাফাও পাওয়া যায় ভাল।  

জেলার সবজি এলাকা খ্যাত আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি, ভেলাবাড়ি, দুর্গাপুর, সাপ্টিবাড়ি, ভাদাই, সদর উপজেলার বড়বাড়ি, মোগলহাট, কুলাঘাট, কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর, কাকিনা, চলবলা, গোড়ল, হাতীবান্ধার ভেলাগুড়ি, পাটিকাপাড়া, গড্ডিমারী, পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা, জোংরা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ গ্রামে চাষ হয়েছে শিমসহ বিভিন্ন জাতের সবজি।  

শিম ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন চাষি।  ছবি: বাংলানিউজ

আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের সবজি চাষি ফেরদৌস আলম। তিনি চলতি মৌসুমে ১৮/২০ হাজার টাকা খরচ করে ৬৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল শিমের চাষ করেছেন। এরই মধ্যে ৩০ শতাংশ বীজ উৎপাদনের জন্য রেখে বাকি ৩৫ শতাংশ জমির শিম বাজারে বিক্রি শুরু করছেন।  

ফেরদৌস বাংলানিউজকে জানান, ৩৫ শতাংশের বাগান থেকে প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চার মণ শিম তুলছেন তিনি। প্রতি মণ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। বিক্রি চলবে বৈশাখ মাস পর্যন্ত। তবে দিন দিন বাজারে আমদানি বাড়ায় কমে আসবে শিমের বাজার মূল্য। তবুও লোকসান হবে না। কারণ প্রথম দুই সপ্তাহের শিম বিক্রি থেকেই খরচ উঠে এসেছে তার। বাকি সময়ের যত শিম বিক্রি হবে সবই মুনাফা।  

এছাড়াও বাকি ৩০ শতাংশের বীজ বিক্রি করেও অর্ধ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৬৫ শতাংশ জমি থেকে চলতি মৌসুমে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন তার।

পাশের গ্রামের চাষি জামাল উদ্দিন চলতি মৌসুমে ৭ হাজার টাকা খরচ করে ১৪ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করেছেন। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে তার শিম বাগান। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই শিম বিক্রি শুরু করবেন তিনি। গত বছরও একই জমিতে শিম চাষ করে অর্ধলাখ  টাকা আয় করেছিলেন এ চাষি।  

তিনি বলেন, ধান চাষে খরচ বেশি কিন্তু দাম কম থাকায় লাভ কম। তাই অল্প জমিতে বেশি মুনাফা করতে শিম চাষ করি। একটু পরিচর্যা করলে শিম চাষে অধিক মুনাফা করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম জানান, শীতকালে শিমের বেশ চাহিদা থাকে তাই বাজারে এর কদরের মত বেড়ে যায় বাজার মূল্য। বিক্রি করতেও ঝামেলা নেই। পাইকাররা ক্ষেত থেকে শিম কিনেন ন্যায্য মূল্যে। অল্প জমিতে বেশি মুনাফা পেতে শিম চাষের বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

শিম ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজ

কালীগঞ্জের চন্দ্রপুরের চাষি আমিনুর রহমান জানান, উঁচু জমিতে ধান চাষ করে তেমন মুনাফা না আসায় গত দুই বছর ধরে সবজি চাষাবাদ করে বেশ মুনাফা পেয়েছেন তিনি। এ বছর ২০ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করেছেন। আগামী সপ্তাহে শিম বিক্রি শুরু করবেন তিনি। আবহাওয়া আর বাজার অনুকূলে থাকলে লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিদু ভূষণ রায় বাংলানিউজকে জানান, শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। এর বিচিরও সবজি হিসেবে কদর রয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শিম চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলেও আশা করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।