ঝালকাঠি: বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ অবকাঠামো ও ফসলের। ফলে বন্যার ক্ষতিতে কৃষকরাই বেশি দিশেহারা হয়ে পড়েন।
যদিও কৃষকদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের যেমন চলছে নতুন নতুন গবেষণা। পাশাপাশি উদ্ভাবিত হচ্ছে ফসলের নতুন জাত ও কৃষি ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন পদ্ধতি। এর ধারাবাহিকতায় ভাসমান বেড পদ্ধতি বন্যা ও প্লাবণে স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের। সেই ভাসমান বেডে আমনের বীজতলা তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন ঝালকাঠির কৃষকরা। সেই সফলতাকে কাজে লাগিয়ে সামনে দিকে কৃষকদের এগিয়ে নিতে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জানা গেছে, দক্ষিণের জেলাগুলো বিশেষ করে পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতে ভাসমান বেডে পদ্ধতিতে দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে চাষাবাদ হয়ে আসছে।
তবে ভাসমান বেডে ধানের বীজতলা তৈরি করা নিয়ে কৃষকদের তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। তবে বন্যার কারণে আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভাসমান বেড নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে কৃষি বিভাগ। আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে জলাবদ্ধ ক্ষেতেই এবার ভাসমান বেডে বীজতলা করা হয়। যে বীজতলা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর আশা জাগিয়েছে কৃষকদের।
কৃষি বিভাগের মতে, বন্যা সহিষ্ণু ভাসমান বেডে বীজতলা তৈরিতে কোনো ক্ষতির সম্ভবনা নেই, বরং এতে বন্যার ক্ষতি এড়িয়ে লাভজনক অবস্থানে চলে যেতে পারেন একজন কৃষক।
জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিবছরই বন্যা, অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। তাই যথা সময়ে ফসল উৎপাদনে বিলম্ব হচ্ছে, যা অনেক সময় ফসলের ঘাটতিতে গিয়ে ঠেকছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বীজতলা তৈরি করতে বন্যার মধ্যেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলায় চলতি আমন মৌসুমে দুই শতাধিক বন্যা সহিষ্ণু ভাসমান বীজতলা তৈরি করে স্থানীয় কৃষকরা। এরমধ্যে সরকারের উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১২০টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। যেসব বীজতলায় বন্যার পানিতে যেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, তেমনি ভালো মানের চারা উৎপাদন হয়েছে।
নলছিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মিলি বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকরা সাধারণত স্থানীয় জাত দিয়ে আমন চাষ করেন, তবে ভাসমান বেডে স্থানীয় জাতের আমনের বীজতলা করে তেমন সফলতা পাওয়া যায়নি। কিন্তু উফসি (বি আর ২৩) অর্থাৎ উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানে বীজতলা করে এবারে ভালো মানের সফলতা পাওয়া গেছে। চারাগুলো যেমন ভালো মানের হয়েছে, তেমনি আশা করা যাচ্ছে ধানের উৎপাদনও বেশি হবে। তিনি বলেন, কেউ কলাগাছের ভেলায় জৈব সার দিয়ে আবার কেউ কচুরিপানা পেঁচিয়ে ভাসমান বেডে বীজতলাসহ সবজি আবাদ করছেন। কৃষকরা যাতে ভাসমান বেডে বীজতলা করতে পারেন এ জন্য তাদের আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। আর এবার সরকারি সহয়তার বাহিরেও অনেকেই ভাসমান বেডে বীজতলা তৈরি করেছেন। ফলে বন্যার সময় এসব বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আর বীজতলা থেকে বেড়ে ওঠা আমনের চারাগুলো নিয়ে ফসলি জমিতে সঠিক সময়ে আবাদ করে ধানের ভালো ফলনের আশায় রয়েছেন কৃষকরা। সার্বিক দিক মিলিয়ে ভাসমান বেডে বীজতলা এ প্রযুক্তিটি সফল বলা চলে। এতে কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, অতিবৃষ্টি, জোয়ারে ও বন্যায় ডুববে না ভাসমান বেড। এমনকি সেচের যেমন প্রয়োজন হয় না, তেমনি কৃত্রিম সার ও কীটনাশকেরও প্রয়োজন নেই বললেই চলে। একটি মাঝারি ধরনের ভাসমান বীজতলায় চার কেজি অঙ্কুরিত বীজ ছিটিয়ে যে চারা জন্মেছে, তা তিন-চার বিঘা জমিতে রোপণ করা সম্ভব। আর উৎপাদন ভালো হওয়ায় আমনের চারা রোপণকারী কৃষকদের চাহিদা পূরণ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদের মাঝেও বিতরণ করা যায়।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ঝালকাঠি জেলার চার উপজেলায় আমরা ১২০টি ভাসমান বেডে আমনের বীজতলা করার জন্য কৃষকদের নগদ টাকা দিয়েছি। তারা বীজতলা করে সফলতা পেয়েছেন। এজন্য স্থানভেদে আরও বেশি সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন। তাতে কৃষকরা যেমন আগ্রহী হবেন তেমনি ধানের উৎপাদনও বাড়বে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে, নিজেরাই পরবর্তীতে ভাসমান বেডে বীজতলা করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
এমএস/আরআইএস/