সাভার (ঢাকা): 'আসেন মামা আসেন, তাজা গোলাপ আছে মামা, পাইকারি রেট মাত্র ২ টাকা। লাগলে চলে আসেন।
বাবা-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে পাঁচ বিঘা জমিতে গোলাপ গাছ রোপণ করে আসছেন তিনি। গোলাপ চাষে প্রতিবন্ধকতা এলেও এবারের মতো এতো বিপদে কখনো পড়তে হয়নি তার। আগে যেখানে প্রতিটি গোলাপ ১০ থেকে ১৫ টাকা ও প্রতি আঁটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছে তিনি, সেখানে করোনার কারণে এখন প্রতিটি গোলাপ বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২ টাকায়। শুধু এখলাসই নন, গোলাপ গ্রামের সাইফুল, সুজন, রিফাতসহ প্রায় অর্ধশতাধিক চাষি এখন এভাবেই ফুল বিক্রি করছেন।
সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামের সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়ি এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, ফুল চাষিরা ছোটো ছোটো কুড়ে ঘর করে ক্ষেতের পাশে বসে এভাবেই দর্শনার্থীদের ডেকে ডেকে ফুল বিক্রি করছেন। দর্শনার্থীরা এলে বাগান থেকে তাজা গোলাপ তুলে দিচ্ছেন ফুল চাষিরা।
গত তিন মাস করোনার কারণে গোলাপ গাছের পরিচর্যা করতে পারেননি অনেক চাষি। ফলে এবার ফলন কম হয়েছে। কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সেগুলো খুচরা হিসেবেই ২ টাকা করে বিক্রি করছেন তারা।
এখলাস বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালের আগে আমরা একটি গোলাপ ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করতাম। কিন্তু করোনার কারণে গত মার্চ থেকে খুব কম বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে, হলেও হচ্ছে ছোট পরিসরে। আর ঘোরাঘুরি, সামাজিক, অফিসিয়াল বা রাজনৈতিক সব ধরনের সভা, সমাবেশ, অনুষ্ঠানও বন্ধ। ফলে ফুলের চাহিদা তেমন ছিল না। গত তিন মাস কোনো ফুল পাইকারি বা খুচরা বিক্রি করতে পারিনি। আবার করোনার কারণে তিন মাস আমরা ফুল চাষিরা মাঠেও যেতে পারিনি। ফুল গাছেই পচে গেছে। এছাড়া দর্শনার্থীরাও গোলাপ গ্রামে আসতে পারেননি। আমরাও পাইকারিভাবে ফুল বিক্রি করতে পারিনি। এখন অল্প কিছু দর্শনার্থী আসতে শুরু করেছেন। তাই কোনো মতে সংসার চালাতে কম দামেই ফুলগুলো বিক্রি করছি। ১২ বছর বয়সী সাইফুল বাংলানিউজকে বলেন, আমার কোনো গোলাপ ক্ষেত নেই। বাগানের চাষিদের থেকে গোলাপ কিনে আনি আর সেগুলো কেটে বাছাই করে গোলাপ বাগানে ঘুরতে আসা মানুষের মধ্যে বিক্রি করি। করোনাকালে বাগান থেকে গোলাপ কিনতেও পারিনি, বিক্রিও করতে পারিনি। তবে এখন গোলাপ গ্রামে কিছু দর্শনার্থী আসায় গত দুই সপ্তাহ ধরে ভালো গোলাপ বিক্রি করছি। তবে আগে যে গোলাপ বিক্রি করতাম ১০ টাকায়, সেটা এখন ২ টাকা করে বিক্রি করছি।
এদিকে করোনাকালে জারবেরা ফুল চাষিদের অবস্থাও একই রকম। ফুলের সঙ্গে গাছও পচে নষ্ট হয়েছে। তবে এখন তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন।
শ্যামপুরের জারবেরা ফুল চাষি পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, করোনার সময় ফুল বিক্রি করতে পারিনি। ফলে শ্রমিকদের টাকাও দিতে পারিনি। ঋণ করে শ্রমিকদের বেতন দিয়েছি। তবে এখন করোনার আগের চেয়ে ফুলের দাম ভালো পাচ্ছি। করোনার আগে পাইকারি দরে একটি ফুল বিক্রি করতাম ৫ টাকায়, এখন করোনা থাকলেও ৭ টাকা করে বিক্রি করছি।
সাভারের গোলাপ চাষিরা উপজেলা কৃষি অধিদফতর থেকে কোনো সহয়তা পাননি বলেও জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
এসআই