ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নতুনত্বে পঞ্চগড়কে চেনাতে সাবাহ'র এক্সিবিশন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৩
নতুনত্বে পঞ্চগড়কে চেনাতে সাবাহ'র এক্সিবিশন

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের ভূ-প্রকৃতি, গ্রামীণ সৌন্দর্য ও বন্যজীবনের বিভিন্ন চিত্র ছবির মাধ্যমে তুলে ধরে পর্যটকসহ সব মানুষকে নতুনত্বে পঞ্চগড়কে জানাতে পর্যটন নগরী তেঁতুলিয়ায় এক মুক্ত এক্সিবিশনের আয়োজন করেছেন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ।

এক্সিবিশন বা আলোকচিত্রী প্রদর্শনীতে ফিরোজ আল সাবাহ'র ক্যামেরায় তোলা পঞ্চগড়ের ভূ-প্রকৃতি, গ্রামীণ সৌন্দর্য ও বন্যজীবনের ছবি তুলে ধরা হয়েছে।

পঞ্চগড় থেকে খালি চোখে দেখতে পাওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘা, বাঘ, পাখি, সাপ, চা বাগান, লালসোনা মরিচসহ বিভিন্ন আলোকচিত্র।

সাধারণত বছরের এ সময়ে দেশের কয়েকটি এলাকায় হালকা শীতের বাতাস বইতে শুরু করে। তার মধ্যে শীত প্রধান অন্যতম জেলা পঞ্চগড়। আর এই শীতের অনুভূতিকে বরণ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তেঁতুলিয়ায় ছুটে আসছেন পর্যটকরা। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের মাঝে জেলাকে উপস্থাপন করতে এক্সিবিশনের মাধ্যমে এই ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ।  

বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলবে আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। যা উন্মুক্ত থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্যামেরায় তোলা পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি, জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, চাপাতার সবুজে ঘেরা পরিবেশ, আটক ভারতীয় বাঘের ছবি, মহানন্দার বুকে পাথর ও বালু উত্তোলনের ছবিসহ প্রকৃতি ও পরিবেশের ২৩ রকমের ভিন্ন ছবি এক্সিবিশনে স্থান পেয়েছে। আলোকচিত্র প্রদর্শনীর প্রথম দিনেই নানান ছবিতে মুগ্ধ হয়েছে পর্যটকসহ দর্শনার্থীরা। একই সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন দেখে আয়োজকদের সাধুবাদ জানিয়েছেন সবাই। পর্যটকসহ আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করতে দেখা গেছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে।

ঠাকুরগাঁও থেকে ঘুরতে আসা জহুরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। এরই মধ্যে ডাকবাংলোতে উন্মুক্ত এমন আয়োজন মুগ্ধ করেছে আমাদের।  

রংপুর থেকে আসা উম্মে হুমাইরা ও জিহান ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা। কিন্তু আকাশ পরিষ্কার না থাকায় ভালোভাবে তা দেখতে পারিনি। এদিকে বাংলাবান্ধা, সমতলের চা বাগান ঘুরে ডাকবাংলোতে আসি। এখানে এসে সাজানো বিভিন্ন ছবি দেখে জানতে পারি এসব ছবি পঞ্চগড়ের। বাস্তবের পঞ্চগড়কে ছবিতে এমন সুন্দর দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। এই ছবি কারিগরকে আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

একই কথা জানান পঞ্চগড় ধাক্কামারা এলাকার আবির হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছি। কিন্তু এর আগে পঞ্চগড়কে এমনভাবে দেখিনি। বাস্তবে পঞ্চগড় যে এত সুন্দর তা এই ছবি না দেখলে বুঝতে পারতাম না। ধন্যবাদ জানাচ্ছি আয়োজককে।

স্থানীয় মোবারক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এর আগে এ উপজেলায় এমন আয়োজন হয়নি। ফিরোজ আল সাবাহর এমন আয়োজনকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।

এদিকে সৌন্দর্যময় প্রকৃতিতে ঘেরা পঞ্চগড়কে ছবির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে উপস্থাপন করতেই এক্সিবিশনের নাম "অপরূপা পঞ্চগড়" দেওয়া হয়েছে বলে জানান সহযোগীরা। একই সঙ্গে টিম ওয়ার্ক হিসেবে যুক্ত হয়ে এমন কাজ করতে পেরে খুশি তারা।

এসময় বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ বাংলানিউজকে বলেন, অনেক ছোট থেকে ছবি তোলার শখ আমার। ছবির নেশা ও পেশায় দেশ-বিদেশে চষে বেড়ালেও ফটোগ্রাফি জীবনের শুরু থেকে বেশিরভাগ সময় কেটেছে পঞ্চগড়ে। এই সময়ে ছবি তোলার নেশায় ঘুরেছি দেশের বিভিন্ন জেলা। এর মাঝে নিজ জন্মস্থানকে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করি। সেই থেকে কাজ শুরু। কাজ শুরুর পর বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার হই। তবে নিজের জেলাকে ও জেলার সংস্কৃতি এবং অদেখা বিভিন্ন স্থান বা বস্তুকে মানুষের মাঝে তুলে ধরতে পেরে গর্ববোধ করছি।  

শখের ফটোগ্রাফি থেকে এখন পেশাদার ফটোগ্রাফার হয়ে উঠেছেন ফিরোজ আল সাবাহ। ফটোগ্রাফির পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছেন তিনি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তেঁতুলিয়ায় আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে এবং সুষ্ঠু বিনোদন উপহার হিসেবে দিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা ট্যুরিস্ট এলাকা নজরদারিতে রেখেছি। পর্যটন নগর খ্যাত তেঁতুলিয়ায় এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।  

জানা যায়, ২০০৬ সালে শখের বশে ফিল্ম দিয়ে ছবি তোলা শুরু করেন ফিরোজ আল সাবাহ। পেশা হিসেবে চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়ে বাঁধায় পড়েন বহুবার। ২০১৪ সালে ব্যাংকার বাবার সহায়তায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তার ভাগ্য। এর মাঝে বাবাকে হারিয়ে আয়ের তেমন কোনো পথ না থাকায় পারিবারিক ব্যবসা থেকে ও সরকারি প্রোগ্রামের সিনেমাটোগ্রাফি থেকে কিছু আয়ে পরিবারের হাল ধরেন তিনি। বাবার দেওয়া উপহারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিশ্বের দরবারে জেলার সৌন্দর্যকে উপস্থাপন করছেন তিনি।  

২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলবে আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।