ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

সাক্ষাৎকারে জেমি সিডন্স

‘আমার দরজা সবসময় সবার জন্য খোলা’

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
‘আমার দরজা সবসময় সবার জন্য খোলা’

জেমি সিডন্সের বায়োডাটা দেখলে বিভ্রান্ত হওয়া সহজ। একসময় জাতীয় দলের হেড কোচ ছিলেন, এরপর ফিরেছেন ব্যাটিং কোচ হয়ে।

এখন আরও এক ধাপ নেমে তার দায়িত্ব ‘এ’ দল ও বাংলাদেশ টাইগার্সে। এসব নিয়ে অবশ্য ভাবার সময় নেই এই অস্ট্রেলিয়ানের। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ব্যস্ততার ফাঁকেই তিনি গত কয়েকদিন ধরে একাডেমি মাঠে কাজ করছেন সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হকদের সঙ্গে।

বেশ আগে এসে নিজেই অনুশীলনের সব সরঞ্জাম ব্যবস্থা করছেন, কাজও করছেন বেশ লম্বা সময় ধরে। আজ (সোমবার) তেমনই এক ব্যস্ততা শেষে দায়িত্ব ছেড়ে আসা, নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আফিফ বা মুমিনুলদের নিয়ে নিজের ভাবনার বিষয়ে সিডন্স কথা বলেছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মাহমুদুল হাসান বাপ্পির সঙ্গে—

বাংলানিউজ : জাতীয় দলের চাকরি ছেড়েছেন কিছুদিন হলো। ‘এ’ দলের কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে কাজও শুরু করছেন। কেমন চলছে সব?

সিডন্স : ডিপিএলের ম্যাচের পর বেশির ভাগ ক্রিকেটারই এখন ক্লান্ত। তাদের বিশ্রামের দরকার, এজন্য অনেকে আসেনি। আজকে সাদমান, শামীম ও মুমিনুল এসেছিল। বেশ সময় নিয়েই কাজ করলাম ওদের সঙ্গে। লাল বলের প্রস্তুতিটাই বেশি নিয়েছি, কারণ সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের সঙ্গে খেলা আছে। তবে কিছু জিনিস বের করার চেষ্টা করেছি যেটা তাদের আরও ভালো ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করতে পারে।

বাংলানিউজ : আপনার কাজের বৈচিত্র্যটাও বোধ হয় বেড়েছে। আজকেও যেমন শামীম পাটোয়ারী ও সাদমান ইসলামকে নিয়ে কাজ করলেন। কিন্তু তারা দুজনেই তো একেবারে ভিন্ন ঘরানার ব্যাটার...

সিডন্স : দেখুন, ক্রিকেট খেলাটা কিন্তু খুবই ‘সিম্পল’। যে ফরম্যাট হোক অথবা যেমন খেলোয়াড়- আপনি যদি বলটা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলেন, একইরকম ফল সবার জন্য। আমি জানি ওরা দুজন একদমই আলাদা, তাদের ব্যক্তিত্ব অথবা টেকনিক ভিন্ন; কিন্তু তাদের ব্যাটিংয়ের ভিত্তিটা ঠিক রাখতে হবে, ওটা এক। আমি কিছু শটে তাদের আস্থা আনতে কাজ করেছি। পুল বা স্কয়ারে কেমন টেকনিক হবে বা নির্দিষ্ট কিছু শটে; এসব নিয়েই কাজ করছি।

বাংলানিউজ : এই ক্রিকেটাররা তো জাতীয় দলেও ছিলেন। সেই ক্যাম্পের সঙ্গে এখানকার পার্থক্যটা কী?

সিডন্স : জাতীয় দলে সবসময়ই ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুত থাকে— পরের টেস্ট ম্যাচ, পরের ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি। এই ক্যাম্প আপনার স্কিলকে ঝালিয়ে নেওয়ার, নতুন স্কিল শেখার, আপনার খেলাটাকে আরও বড় করার জন্য; যেন আপনার আরও বড় ‘গেম প্ল্যান’ থাকে।

যদি আপনি সুইপ শট খেলতে না পারেন, এখানে এসে শিখতে পারবেন। পরে এটা ওয়ানডে বা টেস্ট ম্যাচে গিয়ে খেলবেন। অথবা ধরুন পুল শট নেই, সেটা এখানে খেলতে পারবেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ড্রিল করতে পারেন সেগুলো নিয়ে। জাতীয় দলে এমন সম্ভব না, খুবই কঠিন। আমি শেখাতে পছন্দ করি, তাই এই জায়গাটা ভালো লাগে।

বাংলানিউজ : এবার এসে প্রায় দুই বছর জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। মাঝে কিছুটা সমালোচনা তৈরি হলেও শেষদিকে দল ব্যাটিংয়ে ভালোই করছিল। ভালো সময়ে জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়ায় আফসোস হচ্ছে?

সিডন্স : একদমই না। ছেড়ে যাওয়ার বা দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য এটাই ভালো সময়। আমি আমার কাজটুকু করেছি বলেই মনে হয়। ছেলেরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে। এখন সময় পরবর্তী প্রজন্মকে তৈরি করার। আমি এখানেই উপভোগ করি।

বাংলানিউজ : মুমিনুলের সঙ্গেও তো এখানে কাজ করছেন। একটা লম্বা কঠিন সময় সে কাটিয়ে এসেছে। এখন কেমন দেখছেন তাকে?

সিডন্স : আমার মনে হয় দুই ম্যাচ (টেস্ট) আগেই ৯০ এর মতো (৮৪) রান করেছে। জাতীয় দলে অনেক দিন খেলেনি সে। শেষ ম্যাচেও অপরাজিত ছিল। মুমিনুল সাদা বলের ক্রিকেট খেলা না। এসব বিষয় নিয়েই কাজ করছি আপাতত। খুব দূরের কিছু ভাবছি না।

বাংলানিউজ : মুমিনুলকে আপনি সাদা বলের ক্রিকেটেও দেখছেন তাহলে?

সিডন্স : আমি চাই সে সব ফরম্যাটে খেলুক। গতবার বিপিএলেও দল পায়নি। আমি চাই সে সুযোগ পাক। তার সঙ্গে এটা নিয়ে অনেক কাজ করব বলে ঠিক করেছি।

বাংলানিউজ : কিন্তু মুমিনুলের মতো ক্রিকেটারের কী সব ফরম্যাটে খেলা খুব জরুরি?

সিডন্স : আমার মনে হয় সব ফরম্যাটে খেলার সুযোগ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তার লক্ষ্যপূরণে প্রয়োজনীয় অনুশীলনের জন্যও এটা দরকার। মুমিনুলও শুধু টেস্ট ক্রিকেটার হয়ে থাকতে চায় না। ছয় মাস বা এমন সময় লেগে যায় একটা টেস্ট ম্যাচ খেলতে। এটা সে চায় না, সবসময় দলের সঙ্গে থাকতে চায়। আমরা সব ফরম্যাটের অনুশীলন করছি। আমার মনে হয় এটা তার টেস্ট ক্রিকেটের কোনো ক্ষতি করবে না, বরং সাহায্যই করবে।

বাংলানিউজ : আপনার কাছে টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাটিংটা তাহলে কেমন, আক্রমণাত্মক?

সিডন্স : আপনি বোধ হয় আজকের অনুশীলন দেখে এমন বলছেন! প্রথম দুদিন কিন্তু আমরা রক্ষণাত্মক ব্যাটিং নিয়েই কাজ করেছি, কীভাবে বল ছাড়তে হবে সেটি নিয়েও। আফিফ বা শামীমকে হয়তো অনুশীলনে দেখছেন, কিন্তু তারা আমাদের টেস্ট দলে নেই এই মুহূর্তে। তারা সাদা বলের ক্রিকেটার। কেন তারা চারদিনের ম্যাচে আছে? কারণ তারা আমাদের পরের প্রজন্মের সেরা ক্রিকেটার।

আমরা আশা করছি তারা উন্নতি করবে টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে। কারণ এই ফরম্যাটে আমাদের আরও ক্রিকেটার দরকার। অনেকেই আছে এই ‘এ’ দলে, দীপু (শাহাদাৎ হোসেন), সাদমান (ইসলাম); তারা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তারা কেউ নির্দিষ্ট ফরম্যাটের ক্রিকেটার হওয়ার জন্য অনুশীলনে নেই। তারা আরও ভালো ব্যাটার হতে এসেছে।

বাংলানিউজ : আফিফ দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলে সাদা বলে খেলেছে, লাল বলে এখনও তাকে দেখা যায়নি। এমনিতেই তার খারাপ সময়ের কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন। এখন আবার তাকে রাখা হয়েছে লাল বলের ক্রিকেটে। এটা কি তার সাদা বলের ক্রিকেটে প্রভাব ফেলবে?

সিডন্স : সে কিন্তু এখন সাদা বলের ক্রিকেটই খেলছে (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে)। এটাতে তার যথেষ্ট অনুশীলন হয়েছে। আফিফ নিজে মনে করে সে ভালো লাল বলের ক্রিকেটার। আমরা যেকোনো একটা ফরম্যাটে কাউকে আটকে রাখতে চাই না, এটা কোনো কাজের কথা না। জাতীয় দল সারা বছর খেলে, তারাও সবসময় খেলতে চায়।

তারা জাতীয় দলের হয়ে প্রতিটা ম্যাচ খেলতে চায়, কোনো একটা নির্দিষ্ট ফরম্যাট না। যদি আমরা তাদের নেই, তারা যথেষ্ট ভালো হয়; দারুণ ব্যাপার। সাকিব সব ফরম্যাটে খেলে, মুশফিক খুব ভালোভাবে খেলেছে, তামিম খুব সহজেই সব ফরম্যাট খেলতে পারে চাইলে। আমরা কাউকে একটা নির্দিষ্ট ফরম্যাটে আটকে রাখতে চাই না। আমি মুমিনুল, শামীম বা আফিফকে একটা ফরম্যাটের ক্রিকেটার বলতে পারি না। কারণ তারা সব ফরম্যাটে খেলতে চায়।

বাংলানিউজ : আপনার কি আফিফের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে, তিনি কি টেস্ট ক্রিকেটেও নিজের ভবিষ্যৎ দেখেন?

সিডন্স : সে সবসময়ই বলেছে লাল বলে ভালো করতে পারবে। তার মানে হচ্ছে, সুযোগ পেলে টেস্টেও দারুণ কিছু করার বিশ্বাস আছে।

বাংলানিউজ : আপনি জাতীয় দল ছেড়ে আসার পর জাতীয় দলের ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা হয়েছে?

সিডন্স : কে কোচিং করাচ্ছে এটা নিয়ে তারা ভাবে না। তারা খেলতে চায় শুধু। তাদের এখন নতুন ব্যাটিং কোচ এসেছে, তারা তার অধীনেই কাজ করবে। আমার এখন কাজ হচ্ছে পরের প্রজন্মকে তৈরি করা।

বাংলানিউজ : সাকিব-তামিমদের যদি কখনো আবার আপনাকে দরকার হয়?

সিডন্স : এটাই আসলে মূল পরিকল্পনা আমাদের। যখন জাতীয় দল খেলবে—ধরুন জাতীয় দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছে, তখন তামিমের সঙ্গে কাজ করব। যেকোনো সময় চাইলেই আমার কাছে ফিরে আসতে পারে সব ক্রিকেটার। আমার দরজা সবার জন্য সবসময় খোলা।

বাংলানিউজ : সাকিব-তামিমদের হাত ধরে বিশ্বকাপ আসবে, এমন ভাবছে সবাই। আপনার কী মনে হয়?

সিডন্স : আমার মনে হয় এখন ভালো খেলাটা বেশি দরকার। যদি ওই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটা চালিয়ে যেতে পারি। তাহলে বিশ্বকাপে অনেক দূর যেতে পারব। খুব ভালো করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময় : ১৯৩৩ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৩
এমএইচবি/এএইচএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।