ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ, অরক্ষিত উপকূল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ, অরক্ষিত উপকূল ...

চট্টগ্রাম: আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এইদিনে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, সন্দ্বীপসহ উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঘূর্ণিঝড়ে দেশে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রায় হারিয়েছেন এবং প্রায় ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন। প্রলয়ংকরী এই তাণ্ডবের ৩৩ বছরেও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ হয়নি।

অরক্ষিত উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের খবর শুনলে এখনও নির্ঘুম রাত পার করেন।

বাঁশখালীতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকায় নির্মিত বেড়িবাঁধের নানা স্থানে ভাঙন ধরেছে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম এ বাঁধ সংস্কার শুরু করে। ২০১৫ সালে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০২২ সালে। তবে পুকুরিয়া থেকে ছনুয়া পর্যন্ত সাগর ও নদীর প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধের অধিকাংশ এলাকা এখনও অরক্ষিত।  

ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, ইউনিয়নে ৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৭ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। সি সাইড এবং ইনডোর সাইডে প্রায় ২৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত। ছোট ছনুয়া, মধুখালী ও মহাজের কলোনি এলাকাসহ বেশকিছু স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কার জরুরি।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পাল বলেন, বাঁশখালী উপকূলের বেড়িবাঁধের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারার পারকী সমুদ্র সৈকতের সাপমারা খাল থেকে শুরু করে পরুয়াপাড়া, মধ্যম গহিরা, রায়পুর, বার আউলিয়া, ঘাটকূল, ফকিরহাট, সরেঙ্গা, সাপ মারা খাল হয়ে পারকি বিচ পর্যন্ত, পোল্ডার বি এর অধীনে শিকলবাহা হতে চাতরি, কৈখাইন, পরৈকোড়া, হাইলধর, বারখাইন, তৈলারদ্বীপ, বরুমচড়া, জুঁইদন্ডি, শঙ্খ মুখ পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। বর্তমানে পোল্ডার-এ তে মধ্যম গহিরা বাইগ্যার ঘাট এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধ, ঘাটকুল এলাকায় ৭০০ মিটারের বেশি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। জুইদন্ডি ইউনিয়নেও ৫০০ মিটারের বেশি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা শওকত ইবনে সাহীদ জানান, ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারা ও পতেঙ্গা আংশিক বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হবে। বর্তমানে বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় যৌথভাবে আরও একটি উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ প্রকল্পের অধীনে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নে ২.৭ কিলোমিটার ও জুঁইদন্ডি ইউনিয়নে ২.৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মিত হবে।  

২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে আঘাতহানা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল সীতাকুণ্ডের সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত ৯টি ইউনিয়ন। প্রায় ২২৫ কিলোমিটার গতিবেগ সম্পন্ন ও ৩০-৩৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে উপকূল পরিণত হয়েছিল বিরাণ ভূমিতে। এসময় মারা গিয়েছিল এলাকার প্রায় ৭ হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার শিশু-নারী-পুরুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় তিনশত কোটি টাকার সম্পদ। উপকূলের আংশিক বেড়িবাঁধ সংস্কার হলেও ২৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিতে আছে।

মীরসরাইয়ে হুমকির মুখে পড়েছে মুহুরী প্রজেক্ট বেড়িবাঁধ। মুহুরী প্রজেক্ট বাজার থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধটি পশ্চিম দিকে ফেনীর নদীর ওপর থাকা ৪০ দরজা স্লুইস গেট পর্যন্ত চলে গেছে। বাঁধটি বর্তমানে মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বেড়িবাঁধ থেকে মাটি কাটার ফলে বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সন্দ্বীপে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। বাড়িঘর, ফসলের মাঠ, রাস্তা-ঘাটসহ পুরো সন্দ্বীপ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর বিদেশি দাতাদের অনুদানে নির্মিত হয় বড় বেড়িবাঁধ। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সন্দ্বীপ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই দ্বীপের ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখনও অরক্ষিত। সরকারিভাবে গত দশ বছরে বড় কয়েকটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।