ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

প্রতারক নিজেই যখন প্রতারণার জালে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪
প্রতারক নিজেই যখন প্রতারণার জালে মো.মিজানুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম

চট্টগ্রাম: দুবাই নেয়ার কথা বলে ১১ জনের কাছ থেকে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন প্রতারক বাংলাদেশি যুবক মো.মিজানুর রহমান (২৫)। মিজান দেশে ফেরার পর সেই টাকা উদ্ধারে জোট বাঁধেন প্রতারণার শিকার ১১ জন।

মিজানের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় শুরু করেন প্রতারিত একজনের স্ত্রী। ফাঁদে পা দেন মিজান।


প্রতারণার শিকার তিনজন মিলে ফেনীতে মিজানকে আটকে রেখে ৬ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। অভিযোগ পাবার পর নগরীর বাকলিয়া থানা পুলিশ শুক্রবার গভীর রাতে মিজানকে ফেনী থেকে উদ্ধার করেছে। একইসঙ্গে সাইফুল ইসলাম (৩১) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বাংলানিউজকে বলেন, মিজান আগে দুবাইয়ে ছিলেন। সেখানে একটি প্রতারক চক্রের সঙ্গে মিলে তিনি ১১ জনের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেন। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে মিজান দেশে ফিরে আসার পর থেকে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন ওই ১১ জন। সর্বশেষ এদের মধ্যে তিনজন মিজানকে কৌশলে অপহরণ করার সিদ্ধান্ত নেন।

উদ্ধার হওয়া মিজানুর রহমান মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার মধ্যম জামালপুর গ্রামের আব্দুল ‍মালেকের ছেলে। গ্রেপ্তার হওয়া সাইফুল ইসলাম নোয়াখালি জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার মৃত ইয়াকুব মিয়ার ছেলে।

ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, দুবাই থেকে দেশে ফিরে মিজান নগরীর ‍বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতু এলাকায় সাজেদা সুপার মার্কেটের ভাই ভাই টেলিকমে চাকুরি নেন। দোকানটি তার খালাত ভাই বেলাল হোসেনের।

২০১০ সাল থেকে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে তাকে খুঁজে পাবার চেষ্টা করে। কিন্তু সঠিক ঠিকানা উদ্ধারে ব্যর্থ হন তারা। মাস দেড়েক আগে প্রতারণার শিকার ইউসুফ মিজানের মোবাইল নম্বর পান। এরপর প্রতারণার শিকার আরেকজনের স্ত্রীকে দিয়ে ওই মোবাইলে ফোন করিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেন। মিজান এ প্রস্তাবে সায় দিলে এক মাস ধরে মোবাইলে চলে আলাপ এবং প্রেম। আলাপের এক পর্যায়ে মিজানকে ঢাকায় গিয়ে দেখা করার প্রস্তাব দেয়া হয়।

২৩ ডিসেম্বর রাত ৯টায় মিজান দোকান বন্ধ করে বের হয়ে বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নির্দিষ্ট ঠিকানা অনুযায়ী ঢাকার গুলশান এলাকায় গেলে ইউসুফ, সাইফুলসহ তিনজন মিলে তাকে সেখানে একটি বাসায় আটকে রাখে। এরপর তাকে মেরুল বাড্ডার একটি বাসায় এবং ২৪ ডিসেম্বর রাতে ফেনী সদরের মায়া ক্লিনিকে এনে আটকে রাখা হয়।

২৪ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এবং রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিজানের খালাত ভাই বেলালের মোবাইলে ফোন করে ৬ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণ না দিলে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়।

২৫ ডিসেম্বর সকালে বেলাল বাকলিয়া থানায় গিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বিভিন্ন কৌশলে মিজানের অবস্থান শনাক্ত করে ফেনী সদরে মায়া ক্লিনিকের পাশে একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে ‍‌উদ্ধার করেন। এসময় মিজানকে পাহারারত অবস্থায় থাকা সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাইফুল নিজেও মিজানের প্রতারণার শিকার বলে ওসি জানান।

এ ঘটনায় বেলাল বাদি হয়ে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।