ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় ত্রিপুরার ঊনকোটি

সুদীপ চন্দ্র নাথ, আগরতলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৬
পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় ত্রিপুরার ঊনকোটি

আগরতলা: দেশ-বিদেশের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান ত্রিপুরার ঊনকোটি। আর ঊনকোটি বাংলা শব্দটির অর্থ হলো এক কোটির চেয়ে এক কম।

অর্থাৎ ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯শ’ ৯৯।  

ভারতের উত্তর-পূর্বের একেবারে প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরার প্রবেশদ্বার উত্তর জেলা থেকে ২৭ কি.মি. দূরের ও রাজধানী আগরতলা থেকে ২শ’ ৭৮ কি.মি. দূরের একটি পাহাড়ের নাম ঊনকোটি। এই পাহাড়ের নাম অনুসারে পরবর্তী সময় যখন রাজ্যে জেলার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় তখন একটি জেলার নাম রাখা হয় ঊনকোটি।

এই পাহাড়ের উপর পাথরের গায়ে খোদাই করা আছে প্রচুর সংখ্যক হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি।

জনশ্রুতি অনুসারে আদিকালে হিন্দুদের দেবাদিদেব শিবসহ এক কোটি দেব-দেবী কৈলাস যাচ্ছিলেন। সারাদিন পথ হেঁটে ক্লান্ত দেবদেবীরা এই পাহাড়ে রাত্রি যাপন করেন। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সিদ্ধান্ত হয় পরদিন মানুষ জেগে ওঠার আগেই সকলে এই জায়গা থেকে আবার কৈলাসের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। কিন্তু পরদিন মহাদেব শিবের ঘুম ভাঙ্গলেও অন্য সকলের ঘুম ভাঙ্গেনি তাই শিব সকলকে ফেলে কৈলাসে চলে যান। শিব ছাড়া বাকি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯শ’ ৯৯ জন পাথর হয়ে পড়ে থাকেন।

ঊনকোটি পাহাড়ের গায়ে পাথরে খোদাই করা আছে বিভিন্ন আকারের হিন্দু সম্প্রদায়ের দেব-দেবীর মূর্তি, ছোট আকারের পূর্ণাবয়ব মূর্তি । এছাড়া রয়েছে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা খুব সুন্দর একটি ঝর্ণা।

তবে ঐতিহাসিকদের মতে ঊনকোটির অভিনব এই ভাস্কর্যগুলো তৈরি হয়েছিল অষ্টম অথবা নবম শতাব্দীতে। তবে কে বা কারা এই মূর্তিগুলি নির্মাণ করেছিলো তা এখনও অজানা।

এখানে মূলত দুই ধরণের মূর্তি রয়েছে। কিছু মূর্তি পাহাড়ের গায়ের পাথর খোদাই করে তৈরি আর কিছু বিশাল আকারের পাথর কেটে তৈরি।
এই মূর্তিগুলির মধ্যে শিব, দুর্গা, গণেশ, রাম-সীতা, রাবণ, ব্রহ্মা-বিষ্ণু ইত্যাদি দেব-দেবী রয়েছে। এখানে  শিবের বিশাল বিশাল আকারের মূর্তি রয়েছে। এর মধ্যে শিবের একটি মুখাবয়বের উচ্চতা ৩০ ফুট। যা বিশ্বের সব চেয়ে বড় মুখাবয়ব বলে জানা যায়।

তবে কালের করাল গ্রাসে আজ অনেক মূর্তি ভেঙ্গে গিয়েছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে পাহাড়ের মাটি ক্ষয়ে যাওয়ায় মূর্তিগুলি ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিরা অনেক মূর্তি চুরি করে বিদেশে পাচার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই পর্যটন স্থানটিকে হেরিটেজ স্থান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে। তারা ভাঙ্গা মূর্তিগুলোর আংশিক সংস্কার করেছে।
 
প্রতি বছর মকর সংক্রান্তি ও অশোকাষ্ঠমি তিথিতে পূন্যার্থীরা ঊনকোটি পাহাড়ে যান পূজা দিতে। এই উপলক্ষে বসে মেলা। এই মেলায় ত্রিপুরার পাশাপাশি আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ থেকেও পর্যটকরা আসেন।

বাংলাদেশ সময়:  ১৫০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৬
জিপি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।