ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ৩০ জুলাই ২০২৪, ২৩ মহররম ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘এমএফএসের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উন্নতি হয়েছে’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২১
‘এমএফএসের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উন্নতি হয়েছে’ ...

ঢাকা: করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ করায় আগের তুলনায় স্বচ্ছ ও কার্যকর হয়েছে। উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, তথ্যের পর্যাপ্ততা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়গুলো গুরত্ব দিয়ে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরও উন্নয়ন করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সিপিডি-এর সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় ‘করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি: কতটা কার্যকর ছিল?’ শীর্ষক সংলাপে অতিথিরা এসব কথা বলেন।  

বাংলাদেশ সরকারের এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে যথাযথ সহযোগিতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশের ১৩টি জেলায় ‘গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে।  

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারসহ বেসরকারি পর্যায়ের অন্যান্য সকল সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণ ও সক্রিয় অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করা। এই সংলাপটি এ প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

সংলাপে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত বিষয়গুলোর সারসংক্ষেপ মূল প্রবন্ধ আকারে উপস্থাপন করেন।  

বক্তাদের কথার সারসংক্ষেপে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় দেওয়া এই ধরনের ত্রাণ সামগ্রীর ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে-চাহিদা কত? বরাদ্দ কত? কী ধরনের বরাদ্দ দেওয়া হলো, চাল না নগদ অর্থ? বিতরণ কীভাবে হয়েছে? এবং বিতরণের ক্ষেত্রে কী কী অভিযোগ রয়েছে? এই বিষয়গেুলো পরিকল্পনায় রেখে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া উচিত।  

তিনি বলেন, আলোচনায় এসেছে বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। নালিশ নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বরাদ্দের বিষয়ে তথ্য বাড়াতে হবে। মানুষ অনেক সময় জানেই না যে, সরকার কী ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে জাতীয় তথ্যের অভাব এবং এক দশক আগের তথ্য দিয়ে কাজ চলছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া আগামী দিনে আরও উন্নতি হবে। নতুন দরিদ্র চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি কাজে দেবে। একইসাথে এই তথ্যের নিরাপত্তা, সংরক্ষণ, সুরক্ষা ও নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত হয় যাতে, সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।  

তথ্যের হালনাগাদ, বিভাজন ও নিরাপত্তার ওপর গুরত্বারোপ ও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনসম্পৃক্ততা কীভাবে বাড়ানো যায়, তার ওপর গুরত্বারোপ করেছেন ড. দেবপ্রিয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সংলাপে অংশ নিয়ে বলেন, সরকারের গৃহীত সাম্প্রতিক অনেকগুলো পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে যে, পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। সামনে যেন তথ্যের ঘাটতি না হয়, সে জন্য কাজ করা হবে। এবার চালের ঘাটতি থাকায় ক্যাশ টাকা প্রদান করা হয়েছে। জিআর ও ভিজিএফ ক্যাশ দেওয়া হয়েছে। এটা সত্য যে চাহিদা অনুযায়ী সরকার ত্রাণ দিতে পারেনি। ত্রাণ বিতরণে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি, সামনে যেন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।  

সংলাপে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিতরণের নির্দেশনা থাকে। মানুষ যদি ভালো-মন্দ বিশ্লেষণ করতে না পারে, তাহলে যেকোনো পরিকল্পনা নিলেও তার সুফল পাওয়া যাবে না। প্রকৃত গরিবদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।  

সংলাপে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, করোনার সময় ত্রাণ সহায়তা হিসেবে নগদ সহায়তা বিতরণে সরকার যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। মাত্র অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রযুক্তিকে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকার মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অপারেটরকে যুক্ত করার কারণে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ হয়েছে এবং সহায়তা পেতে কাউকে কোথাও যেতে হয়নি।  

তিনি বলেন, ৫০ লাখ পরিবারকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তালিকা যাচাই-বাছাই করার কারণে প্রকৃতপক্ষ ৩৬ লাখ পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া গেছে। আমি এটাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখি। এখানে সরকারের ৩৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

তানভীর এ মিশুক বলেন, আগে আমরা দেখতাম, ত্রাণের চাল বা ঢেউ টিন চুরির খবর সংবাদপত্রে আসত। এবার কিন্তু কোনো চুরির খরব আসেনি। কারণ এর কোনো সুযোগই ছিল না। তবে স্থানীয় পর্যায় থেকে যে তালিকা এসেছে, সেটা নিয়ে আমার বিশেষ কিছুই বলার নেই।  

তিনি বলেন, আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সব ডেটা আছে সরকার চাইলে সেটা ব্যবহার করতে পারে এবং ত্রাণ বিতরণে সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচির পলিসি উপদেষ্টা আনির চৌধুরী বলেন, তথ্যের পর্যাপ্ততার বিষয়টি অপ্রতুল ছিল, এটা সত্য। সরকারের সৎ উদ্দেশ্য থাকার পরও সবার কাছে ত্রাণ খবর পৌঁছানো যায়নি, এটা সত্য। সামনের দিনে এটাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সংলাপে সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ অংশ নেন। এ ছাড়া অক্সফ্যামের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরাও সংলাপে অংশ নিয়ে তাদের মতামত জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২১
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।