ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পদ্মা সেতু: মোংলা বন্দর হবে অর্থনৈতিক হাব 

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
পদ্মা সেতু: মোংলা বন্দর হবে অর্থনৈতিক হাব  মোহাম্মাদ মূসা

বাগেরহাট: দেশের মানুষ এখন পদ্মা সেতু চালুর অপেক্ষায়। আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তের।

২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু উদ্বোধন করবেন। কোটি মানুষের স্বপ্নের এই সেতু চালু হলে এককভাবে সবথেকে বেশি লাভবান হবে মোংলা সমুদ্র বন্দর।  

সেতু চালুর মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দরে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, মোংলা বন্দর কীভাবে লাভববান হবে সে বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মাদ মূসা।  

মোহাম্মাদ মূসা বলেন, অচিরেই পদ্মা সেতু চালু হবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়া মোংলা বন্দরের জন্য একটি বড় সুখবর। সেতু চালু হলে বন্দরের গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী বিজিএমই, বিকেএমই অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। পদ্মাসেতু চালু হলে মোংলা বন্দর হবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক হাব। মোংলা বন্দরকেও সেভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।

বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রধান নিয়ামক হচ্ছে সহজ এবং হ্যাসেলমুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। পদ্মাসেতু চালুর মাধ্যমে বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের ব্যবসায়ীদের সেই যোগাযোগ ব্যবস্থা তরান্বিত হবে। মোংলা তো শুধু বন্দর নয়, মোংলায় সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, এলপিজি গ্যাস ফ্যাক্টরি, মোংলা অর্থনৈতিক জোন, মোংলা ইপিজেডসহ নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান মোংলায় তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। অনেকে মোংলা-রামপাল এলাকায় জমি ক্রয় করেছেন, কেউ কেউ এখনও জমি ক্রয়ের চেষ্টা করছেন। পদ্মা সেতু চালু হলে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড অনেক বৃদ্ধি পাবে। কর্মসংস্থান হবে হাজার হাজার মানুষের। মোংলা-রামপালের মানুষের জীবনমানেরও উন্নতি ঘটবে এই সেতুর মাধ্যমে।

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দাবি করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দরে কাজের চাপ অনেক বাড়বে। এজন্য বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা আউটার বাড়ের ড্রেজিং শেষ করেছি। ইনারবাড়ের ড্রেজিং চলছে, যা ২০২৩ সালের জুনে শেষ হবে। বন্দরের কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ৭৫টি আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। ৬টি আধুনিক জলযান সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে দিনে ৫০ লক্ষ লিটার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৮ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।  

এছাড়াও ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দর আপগ্রেডেশন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা চারগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেন তিনি।

বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশে বর্তমানে তিনটি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার। অন্যদিকে ঢাকা থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব মাত্র ১৭০ কিলোমিটার। দূরত্ব কম হওয়া স্বত্বেও ফেরির বিড়ম্বনার কারণে এতদিন অনেক ব্যবসায়ী মোংলা বন্দর ব্যবহার করেননি। পদ্মা সেতু চালু হলে, ফেরির বিড়ম্বনা আর থাকবে না। পরিবহন ব্যয় ও সময় বাঁচাতে দেশের ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে আরও বেশি আন্তরিক হবেন বলে মনে করেন বন্দরের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

১৯৫০ সালে পশুর নদীর জয়মনির ঘোলে চালনা অ্যাংকারেজ পোর্ট নামে মোংলা সমুদ্র বন্দরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ব্রিটিশ পতাকাবাহী বানিজ্যিক জাহাজ দি সিটি অব লিয়নস সর্বপ্রথম এই বন্দরে এসেছিল। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মোংলা বন্দর বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ও অন্যতম বন্দর হিসেবে পরিণত হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।