ভোলা: ভোলার দৌলতখানের হাজিপুর ইউনিয়নে ভোটার থাকলেও নেই ইউনিয়নের অস্তিত্ব। তবুও সেই ইউনিয়নে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ইউপি কার্যালয়, ভোটারদের বসবাস কিংবা কোনো স্থাপনা না থাকলেও কেন সেখানে ভোট হচ্ছে তা জানা নেই কারো। সেই ভোট নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটার এবং প্রার্থীরাও পড়েছেন বিপাকে।
জোনা গেছে, ভালার দৌলতখান উপজেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রচীনতম ইউনিয়ন হাজিপুর। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে ইউনিয়নটির বেশিরভাগ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে সেখানে দুটি কুড়ে ঘর, মহিষ রাখার বাতান এবং ৪৫টি ছোট ছোট মাছের আড়ত ও কয়েকটি বসত ঘর দেখা গেলেও সেখানে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বসবাস করেন না।
ভাঙনে বাড়িহারা মানুষগুলো উপজেলা সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছেন। কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকলেও সেখানে বসতি নেই কারো। নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেই ইউনিয়নের মেঘনার বুকে জেলেদের মাছ শিকার করতে দেখা যায়।
হাজিপুর এলাকার জেলে জলেদের ইব্রাহিম ও রিয়াজ বলেন, আগে এখানে ইউনিয়ন ছিল, এখন নেই। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চারদিকে নদী, আমরা এখানে মাছ শিকার করছি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে হাজিপুর ইউনিয়নের কোনো অস্তিত্ব নেই। ৯০ শতাংশ জনপদ মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। ইউনিয়নটিতে কিছু না থাকলেও শুধু ভোটার রয়েছে এমন অজুহাতে ভোটগ্রহণের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোট কেন্দ্র সরিয়ে আনা হয়েছে মূল ভূ-খণ্ডে। উপজেলা সদরের দৌলতখান উচ্চ বিদ্যালয়ের ২টি ভবনে একই স্থানে ৯টি ওয়ার্ডের ভোট হবে। সেই লক্ষ্যে প্রচার-প্রাচারণাও করছেন প্রার্থীরা। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দৌলতখান উপজেলা সদরে প্রার্থীদের পোস্টার লাগাচ্ছিলেন রাসেল। তিনি বলেন, হাজিপুরের ভোট নেই। তাই দৌলতখান পৌর এলাকায় পোস্টার লাগাচ্ছি। এই পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ২ হাজার পোস্টার লাগিয়েছি।
ভোটার সাফিজল ও ফয়সাল বলেন, হাজিপুর নদীতে ভেঙে গেছে, সেখানকার ভোট হবে মূল ভূ-খণ্ডে। আমরা প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ করছি। অনেক ভোটার সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বসবাস করেন। তাদের কাছে গিয়ে ভোট চাচ্ছি।
হাজিপুরের বাসিন্দা ইউসুফসহ কয়েকজন জানালেন, শুনেছি আমাদের এলাকার ভোট হবে দৌলতখানে। আগে হাজিপুর বসবাস করতাম। এখন সৈয়দপুর বসবাসস করছি। প্রার্থীরা হাজিপুর না গিয়ে আমাদের কাছে ভোট চাচ্ছেন।
ইউনিয়নের অস্তিত্ব না থাকার পরেও কেন ভোট হচ্ছে তার সঠিক উত্তর দিতে না পারলেও প্রার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন রির্টানিং অফিসার মো. আব্দুস সালাম খান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সেই মোতাবেক ভোট নিচ্ছি। বর্ষা মৌসুম থাকায় ভোটাররা নদী পেরিয়ে হাজিপুর যেতে পারবেন না, তাই নিরাপদ স্থানে ভোট কেন্দ্র আনা হয়েছে।
১৫ জুন হাজিপুর ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে মোট ভোটার রয়েছেন তিন হাজার ৪৩৩জন। এদের মধ্যে পুরুষ
ভোটার এক হাজার ৭৪৬ জন এবং নারী ভোটার এক হাজার ৬৮৭ জন। ২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইউনিয়নটিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৪ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
এসআইএস