ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

বনপানের সৌন্দর্য হাজার টনের নিচে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৪
বনপানের সৌন্দর্য হাজার টনের নিচে রেললাইনে শোভা ছড়িয়েছে ‘বনপান’। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: একেক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওজন কত হতে পারে? ধরে নেই ৬০ কেজি থেকে ১২০ কেজি। কিংবা তারও কিছু বেশ।

ব্যক্তিটি খুব যদি মোটাসোটা হয়ে থাকেন তবে হয়ত হতে পারেন দেড়শ কেজির কাছাকাছি। তার বেশিতো নয় কোনোক্রমেই।

কিন্তু হাজার হাজার মানুষকে যে যানবাহন করে বয়ে দ্রুতবেগে নিয়ে চলে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে, তার সঠিক ওজন কষতে গেলে সত্যি মাথা ঘুরে যায়! সমান্তরাল দুটো
লাইন, তার ওপর দিয়ে নিজের দেহের ভারী ভারী লোহালক্কড়, দানবীয় একাধিক ইঞ্জিন আর হাজারো মানুষদের বয়ে নিয়ে যাচ্ছে একেকটি লোকাল বা আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন।

সেই ট্রেনের যে পথ তার নিচেই এই ছোট ছোট নীলাভ বনপানদের গভীর শোভা। যেহেতু ওরা একটি-দুটি নয়, অগণন। প্রস্ফুটিত হয়ে পরমানন্দের হাসিতে তাকিয়ে আছে পৃথিবীর দিকে!

রোববার (৩১ মার্চ) স্থানীয় রেললাইনের একেবারের লৌহদণ্ডদ্বয়ের গা ঘেঁষে ওদের ফুলেল উত্থান। তাদের বিচিত্র বৃত্তাকার শোভার জন্যে দ্রুতই আটকে গেল চোখ। রেললাইনের লৌহদণ্ডের ঠিক নিচে এত সুন্দর ফুলের দেখা পেয়ে হঠাৎ ভিন্নধর্মী ভাবনায় জর্জরিত হতে হলো।

যান্ত্রিক দানবদের যাতায়াতের এই বিচিত্র পথে নিচে কীভাবে ওরা নিজেদের মেলে ধরে আছে? ওপর দিয়ে দ্রুতবেগে ছুটে যায় হাজার টনের গতিময় দানব। আর ঠিক তারই নিচে ছোট্ট একটুখানি জায়গাজুড়ে পরম বিস্ময়ে এই নীলাভ সৌন্দর্যের উপস্থিতি। আর তাদের ওপর দিয়ে ছুটে যায় হাজার টনের গতি!

উদ্ভিদবিষয়ক গবেষক ও আলোকচিত্রী জিনিয়া নাসরিন সুমন বাংলানিউজকে বলেন, এই ফুলগুলোর নাম ‘বনপান’। তবে ‘বুড়ির গুয়াপান’ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। এর ইংরেজি নাম Hairy Coneflower এবং বৈজ্ঞানিক নাম Strobilanthes hirta

তিনি আরও বলেন, এরা Acanthaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এই পরিবারের অনেক উদ্ভিদ বাগানে শোভাবর্ধন করে। যেমন, আতশবাজি ফুল (Fire spike flower), Honey suckle. রাজার আলখাল্লা (Kings mantle), পিটুনিয়া, সাদা ঝিণ্টি প্রভৃতি।

এ ফুল সম্পর্কে জিনিয়া নাসরিন বলেন, সুন্দর আইসক্রিমের কোণের মতো এই ফুল। সাদাটে-বেগুনি। এর রোমশ পাতার জন্য এর নাম Hirta। মাটি আর ঘাসের সঙ্গে মিশে থাকে। ম্যাটের মতো ছড়িয়ে যায়। এদের সমনাম Ruellia। এগুলো ওষুধি উদ্ভিদ। যেমন, স্বর্ণঝিণ্টি, উদুযাতি, বৈশল্যকরণী, কালমেঘ, বাসক, জগতমদন। বুনো অনেক প্রজাতি আছে। যেমন, গঙ্গাতারা, তালমাখনা, ইৎকট, পরামূল, নীল বনলতা, হায়া, পোস্তাবুটি, পিণ্ডি এবং এই বুড়ির গুয়াপান।

নেপালে একে ‘বনপান’ বলে। হয়ত ওষুধি গুণ আছে। এর পাতার আকার এবং ফুল খুবই ছোট বলে জানান বৃক্ষের নতুন প্রজাতির উদ্ভাবক জিনিয়া নাসরিন সুমন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৪
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।