ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

কুয়াশা উপেক্ষা করেই চলছে উৎরাইল হাটের কেনা-বেচা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৪
কুয়াশা উপেক্ষা করেই চলছে উৎরাইল হাটের কেনা-বেচা

মাদারীপুর: মঙ্গলবার ভোর। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে আছে মাদারীপুর জেলার শিবচর।

ভোর পেরিয়ে সময় গড়িয়ে গেলেও রোদের দেখা নেই। কুয়াশা যেন আরও জেঁকে বসে প্রকৃতিতে। এই তীব্র কুয়াশা উপেক্ষা করেই গ্রামীণ হাটে ছুটে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। ভোর হতেই চলছে কেনা-বেচার ব্যস্ততা। তবে কুয়াশা থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আসতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের!

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) জেলার শিবচর উপজেলার সাপ্তাহিক উৎরাইল হাটে দেখা গেছে এই চিত্র।

হাটের একাংশে পাট ও রবিশস্য বিক্রি হয় ভোরের আলো ফোটার আগে। সকাল ৯টার মধ্যেই কেনা-বেচা শেষ হয় এই অংশের। এছাড়া অন্য অংশে সবজি, মাছসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য বেচাকেনা চলে দুপুর পর্যন্ত।  

সরেজমিনে মঙ্গলবার ভোরে দেখা গেছে, উৎরাইল নয়াবাজার থেকে আড়িয়াল খাঁ সেতুর সড়কের কিছু অংশে পাট ও রবিশস্য বিক্রি চলছে। পণ্য নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। চলছে হাঁকডাক ও বেচাকেনা। তীব্র কুয়াশার মধ্যেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা দেখা যায়। ভোর থেকেই থ্রি-হুইলাসহ যানবাহন চলাচলের ব্যস্ততা শুরু হয়। সাধারণত, অন্য যেকোনো দিনের কুয়াশা মাখা ভোর থাকে নীরব ও নির্জন। সড়কে যানবাহনের ব্যস্ততা থাকে না। তবে হাটের দিনের চিত্র আলাদা। জীবিকার তাগিদে যথাসময়ে ছুটে আসেন ব্যবসায়ীরা। থ্রি-হুইলারসহ পরিবহন নিয়ে বের হন চালকেরা। কুয়াশার মধ্যে হেড লাইট জ্বালিয়ে এসব যানবাহন চলতে দেখা গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, 'প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার শিবচরের উৎরাইল হাট বসে। প্রায় দুইশ বছরের বেশি পুরানো এই হাট। গ্রামীণ অর্থনীতিতে উৎরাইল হাট বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই হাটের ওপর নির্ভর করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়াও এই এলাকাসহ আশপাশের গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একটা ক্ষেত্র এই উৎরাইল হাট। সপ্তাহের একদিন নানা পণ্য নিয়ে উপার্জনের আশায় হাটে আসেন স্থানীয়রা।  

মো. কাওসার নামে এক চায়ের দোকানি বলেন, 'মঙ্গলবার হাটের দিন বেচাকেনা অনেক হয়। সকাল থেকেই দোকানে প্রচুর ভিড় থাকে। একদিনের উপার্জন অনেক এগিয়ে দেয়। '

আক্তার হোসেন নামে এক দোকানি বলেন, 'আমি মূলত সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করি। প্রতিদিন বিকেলে মাছের বারবিকিউ হয় এখানে। তবে মঙ্গলবার ভোর থেকে চা, রুটি, কলা বিক্রি করি। হাটের দিন লোকজনের সমাগম বাড়ে। বিক্রিও হয় প্রচুর। '

ইজিবাইক চালক মো. আসাদ বলেন, 'হাটের দিন ব্যস্ততা বেশি থাকে। যাত্রীদের ভিড় অনেক। তবে কুয়াশার কারণে গাড়ি ধীর গতিতে চালাতে হয়। '

পাটহাটের ইজারাদার মো. তৈয়ব খান বলেন,'আজ কুয়াশা প্রচুর। সামান্য দূরত্বেও দেখা যায় না কিছু। তবে হাটের দিন থাকায় ভোর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতারা চলে এসেছে। বেচাকেনাও চলছে। তবে কুয়াশা এবং শীতের কারণে বেশ কষ্ট হচ্ছে অনেকের। দূর থেকে হাটে আসতে দেরিও হচ্ছে। এই হাটের বেচাকেনা ভোরের আগেই প্রায় শেষ হয়ে যায়। ফজরের পরেই শুরু হয় বেচা-কেনা। আজ কুয়াশা থাকায় দেরি হচ্ছে। '

গ্রাম্য হাট গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের এক অন্যতম জায়গা এই হাট। যুগ যুগ ধরে এসব হাটের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে অসংখ্য পরিবার। সপ্তাহের মঙ্গলবার এই এলাকার মানুষ এক উৎসব বলে মনে করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।