দিনাজপুর: সংসারের কাজের ফাঁকে কিংবা পড়ন্ত বিকেলে দিনাজপুরের সদর উপজেলার চাঁদগঞ্জ এলাকায় দেখা যায় দলবেঁধে কাজ করছেন গ্রামীণ জনপদের নারীরা।
গার্মেন্টস, টেইলার্স কিংবা দোকানের কাপড়ের ফেলে দেওয়া অংশ মাপ করে কেটে নিয়ে তৈরি করছেন ব্যবহার উপযোগী ব্যাগ।
চাঁদগঞ্জ এলাকার রহিমা খাতুন। সংসারের কাজ শেষ করে ব্যাগ তৈরির কাজে লেগে পড়েন। কথা হলে রহিমা খাতুন বলেন, আমরা গ্রামের নারীরা কাজ শেষ করে তো অবসর সময়ে বসেই থাকতাম। একদিন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে আমাদের ব্যাগ তৈরির কাজ করার কথা বললো। আমরা তখন কয়েকজন কাজটা শিখলাম। এখন আমরা নিজেরাই বিভিন্ন ডিজাইনের ব্যাগ তৈরি করতে পারি। এই ব্যাগগুলো তৈরি করে এখন তো কিছু টাকা পাচ্ছি। এটা দিয়ে সংসারের কাজে লাগাতে পারি, ছেলে-মেয়েদের খাতাপত্র কিনে দিতে পারি। বসে থাকলে তো এসব হতো না।
একই এলাকার রেহানা খাতুন বলেন, ব্যাগ তৈরির কাজটা বেশি কঠিন কাজ নয়। বাড়ির কাজের ফাঁকে ফাঁকে করতে পারি। মেয়ে মানুষ চাইলে তো আর বাইরে যেতে পারে না। ঘরে বসেই এই ব্যাগ তৈরি করতে পারছি হাজী দানেশের শিক্ষার্থীদের কারণে। টাকা আয় করতে পারছি। সবসময় তো স্বামীর কাছে টাকা চাওয়া হয় না। আমার মতো অনেকেই এখন এই ব্যাগ তৈরি করতে শিখছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তমিজ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগটা অনেক ভালো। তারা গ্রামের অবহেলিত নারীদের নিয়ে কাজ করতেছে। যারা এই কাজটা শিখেছেন তারা এখন থেকে ব্যাগ তৈরি করে কিছু টাকা আয় করতে পারবেন। এসব শিক্ষার্থীর সঙ্গে যদি কোনো সংস্থা বা সরকারিভাবে সহায়তা করে তাহলে তারা আরও বড় পরিসরে নারীদের কাজটা শিখাতে পারবে।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী স্বপ্ন বুনন নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এসব ব্যাগ ছড়িয়ে দিতে চান দেশ ও দেশের বাইরে। কথা হলে শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, গ্রামের নারীরা সাধারণত বাইরে যেতে পারেন না বিভিন্ন সমস্যার কারণে। তাছাড়া তারা মূলত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে উপেক্ষিত থাকে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই কাজটা গ্রামীণ নারীদের শেখাতে হবে। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে চাঁদ এলাকার নারীদের এই কাজটা শেখাই। এখন তারা এই ব্যাগ তৈরির মাধ্যমে উপার্জন করতে পারছেন। আমরা সব শিক্ষার্থী হয়তো থাকবো না কিন্তু তাদের যে এই শিক্ষাটা এটার মাধ্যমে তারা সারা জীবন ইনকাম করে যেতে পারবেন। টেইলার্সের কিংবা গার্মেন্টসের টুকরো কাপড়গুলো ফেলে দিলে পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো থেকে ব্যাগ তৈরি করলে আয় করার পাশাপাশি পরিবেশও দূষণমুক্ত হচ্ছে।
শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলে, প্রাথমিকভাবে নারীদের তৈরি এসব ব্যাগ দেখে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করছি। আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা এটাকে আরও সুবিস্তৃত করা। আমরা চাই নারীদের তৈরি এসব ব্যাগ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যেন যায়।
প্রতি বছর ৫৭৭ হাজার মেট্রিক টন এমন ফেলনা কাপড় বের হয়, যার মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ ব্যবহার করা হয় বলে জানান শিক্ষার্থী তৌফিক বিশ্বাস। তিনি বলেন, যে পরিমাণ কাপড়ের টুকরো নষ্ট হয় এগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি আর্থিক লাভবানও হতে পারি। আমরা চাই আমাদের ‘স্বপ্ন পূরণ’ প্রতিষ্ঠানটি একটি বড় সংগঠনে পরিণত হবে। আমরা এটিকে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপদান করতে চাই যেখানে অনেক গ্রামীণ নারী কাজ করতে পারবেন।
চাঁদগঞ্জ এলাকার রহিমা বেগম কিংবা রেহেনা খাতুন এর মতো অনেকেই এখন ব্যাগ তৈরি কাজ করতে ইচ্ছুক। ব্যাগ তৈরির মাধ্যমে উপার্জন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এলাকার অনেকেই।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২৪
আরএ