ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেলো মমতার সরকার, পঞ্চায়েত ভোটেও থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেলো মমতার সরকার, পঞ্চায়েত ভোটেও থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী (আধা সামরিক সেনাবাহিনী) মোতায়েনের জন্য সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় দেয়, সেই নির্দেশই বহাল রাখলো ভারতের শীর্ষ আদালত। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্যের নির্বাচন কমিশন যে মামলা (স্পেশাল লিভ পিটিশন) দাখিল করে, তা খারিজ করে দিলো সুপ্রিম কোর্ট।

মঙ্গলবার (২০ জুন) সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী বলেন, পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার আগ্রহ আমাদের সরকারের রয়েছে। এ কারণে ভারতের ৫টি রাজ্য থেকে পুলিশ চাওয়া হয়েছে। যাতে স্পর্শকাতর বুথের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা যায়।  

এ কথা শুনেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবিকে প্রশ্ন করেন, এর মানে আপনারা স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, রাজ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যায় পুলিশবাহিনী নেই? তাই অন্য রাজ্য থেকে বাহিনী চাইতে হচ্ছে আপনাদের? তার চেয়েও তো ভালো এক জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা। এতে আপনাদের আপত্তি কোথায়?

এদিন একইভাবে শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তরফে আইনজীবী ছিলেন মীনাক্ষী অরোরা। বিচারপতি নাগরত্ন এদিন তার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, আপনাদের কাজ তো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট করানো। কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়ার পর আপনারা তা পালন করলেন না কেন? বাহিনী কোথা থেকে আসবে, সেটা তো আপনাদের দেখার কথা নয়!

একইভাবে আদালতে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী হরিশ সালভে বলেন, খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। রাজ্য সরকারের হয়ে কাজ করছে। অথচ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ থাকা উচিত। এখানে আইনের শাসন নেই। বরং শাসক দলের আইন চলছে। এমন নয় যে, এই প্রথমবার পঞ্চায়েত ভোটে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনার ধারাবাহিকতা রয়েছে। এবারও পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে থেকেই সহিংসতার ঘটনা শুরু হয়। এখনও পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কা রয়েছে, এই সহিংসতার মাত্রা আরও বাড়তে পারে।  

একই ধরনের মন্তব্য করেন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর আইনজীবী বিবেক টাঙ্কাও।

প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে শুনানি চলার পর বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিল করেছে, তার কোনো যৌক্তিকতা রয়েছে বলে আদালত মনে করছে না। তাই তা খারিজ করে দেওয়া হলো। কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে সেটাই বহাল থাকবে।

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের সহিংসতা নিয়ে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী কলকাতা হাইকোর্ট মামলা করেন। সেই মামলায় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আধা সামরিক সেনাবাহিনী মোতায়নের রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সেই রায় রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মনঃপূত না হওয়ায়, তারা রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করে। সেই পিটিশন খারিজ করে হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। এহেন রায়ে মূলত বড় ধাক্কাই খেলো মমতার সরকার।

এক প্রকার বাধ্য হয়ে প্রতি জেলায় এক কোম্পানি করে আধা সামরিক সেনাবাহিনী (কেন্দ্রীয় বাহিনী) মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিলো রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই সিদ্ধান্ত মতো এদিনই (২০ জুন) কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের ২২ জেলার জন্য ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠায় কমিশন। এক কোম্পানিতে সাধারণত ১০০ থেকে ১০৫ জন সদস্য থাকেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
ভিএস/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।