ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

হাসপাতলে জরুরি সেবা দিয়েও রোজা রাখছেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যকর্মীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৪
হাসপাতলে জরুরি সেবা দিয়েও রোজা রাখছেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যকর্মীরা

কলকাতা: একে তো জরুরি বিভাগের পরিষেবা, তার ওপর ডিউটি আওয়ার্স শেষ হয়ে গেলেও নানান পরিস্থিতির কারণে কর্তব্য ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না। যদিও রাজ্য সরকার রোজাদারদের কথা ভেবে কাজের সময় কমিয়ে বিকেল সাড়ে তিনটা করেছে।

কিন্তু তাড়াতাড়ি ছুটি হলেও তারা যেতে পারছেন কই! ফলে আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রোজা পালন করছেন বাংলার সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর এই পবিত্র রমজানে তাদের বার্তা, সবার সহযোগিতা আর দোয়া থাকলে, রোজা এবং সেবা দুটোই সামাল দেওয়া সম্ভব।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরিতে ডিউটি করেন আফতাব উদ্দিন মল্লিক। হাওড়া জেলার বাসিন্দা স্বাস্থ্যকর্মী মল্লিকের কথায়, বাসায় থাকলে যেভাবে রোজা পালন করা যায়, নামাজ পড়তে সুবিধা হয়, হাসপাতালে থাকলে সেভাবে হয় না, একটু অসুবিধা হয়। তবুও করে নিতে হয়, দুটোই করতে হবে, কারণ দুটোই কর্তব্য।

একইমত মালদহ জেলার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ফিজিয়োলজি ডিপার্টমেন্টে ডিউটিরত মো. মোদসার হোসেনের। তার অভিমত, তিনি একজন পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মী। তাই ডিউটি করতে হবে। রোজার মধ্যেও নাইট ডিউটি করছেন। বাসা থেকেই সেহরির জন্য খাবার আনেন। মনে কোনো আক্ষেপ নেই।

রাজ্যের উত্তরবঙ্গ কোচবিহার জেলার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ডিউটি করেন কলকাতার বাসিন্দা হাবিবুল রহমান শেখ। তার কথায়, রোজা তো আমাদের পালন করতেই হবে। এটা আমাদের ফরজ। স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমরা অন ডিউটিতে এটা পালন করছি, তাতে আমাদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না এই রাজ্য সরকারের অধীনে। তবে সমস্যা একটাই হয় ইফতারের সময়। কারণ আপৎকালীন দায়িত্ব সামাল দিতে হয়।

রমজান মাস উপলক্ষে শুধু মুসলিম সরকারি কর্মীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের নির্দেশ রয়েছে, বিকাল সাড়ে তিনটেয় ছুটি দেওয়ার। এই ছুটির বিষয়ে কলকাতার পিজি হাসপাতেল দায়িরত্ব আফতাব উদ্দিন মল্লিক বলেছেন, হাসপাতালের জেনারেল ডিউটিতে যারা রয়েছেন তাদের জন্য ছুটিটা অবশ্যই সুবিধাজনক। কাছাকাছি বাড়ি হলে বাড়িতে গিয়ে তারা নিয়মমাফিক ইফতার করতে পারেন। কিন্তু যারা ইমারজেন্সি ডিউটিতে থাকেন, শিফটিং ডিউটিতে থাকেন, তাদের কাছে উপায় নেই। তাদের দুটোই সামাল দিতে হচ্ছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও এই রকম ডিউটির কারণে এই সময়েও ছুটি নেওয়ার উপায় নেই। আমাকে তো পরিষেবাটাও দিতে হবে। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, অনেক সময় পরিস্থিতি এমন হতেই পারে যে ডিউটি আওয়ার্স শেষ হয়ে গেলেও ইমারজেন্সির কারণে ডিউটি ছেড়ে, কর্তব্য ফেলে চলে যাওয়া যায় না।

হাবিবুল রহমান শেখ বলেছেন, আমাদের ডিপার্টমেন্ট তো ফাঁকা রাখা যায় না, দিনরাত ৭ দিন পরিষেবা প্রদান চলতে থাকে। এই সময় অল্টারনেট করে আমরা ডিউটি করি। যেমন, আমাদের কেউ যদি মর্নিং ডিউটি করে নেন, তা হলে বিকাল তিনটে সাড়ে তিনটের মধ্যে তার ছুটি হয়ে যাচ্ছে। তখন ডিউটি থেকে ফিরে গিয়ে তিনি ইফতার করতে পারছেন। আবার যদি আমাদের কেউ ইভনিং ডিউটি করেন, বিকাল তিনটে থেকে শুরু হয় ইভনিং ডিউটি। তিনটে থেকে পাঁচটা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ডিউটি করে ১৫-২০ মিনিটের জন্য ইফতার করে নিয়ে আবার ডিউটিতে জয়েন করেন তিনি।

ইফতারের জন্য যথেষ্ট সহযোগিতা করেন আমাদের হিন্দু সহকর্মীরা।

তিনি আরও বলেন, আসলে কোনও স্বাস্থ্যকর্মীর ক্ষেত্রে ফিক্সড ডিউটি আওয়ার্স হয় না যে বিকাল সাড়ে তিনটের সময়েই আমরা ডিউটি থেকে বের হতে পারব। পরিস্থিতি এমন দেখা দিতে পারে যেখানে ডিউটি আওয়ার্স শেষ হয়ে গেলেও ডিউটি ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৪
ভিএস/নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।