গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় হামাসের কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র রয়েছে, এমন দাবিতে চার মাস আগে সেখানে হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এখন আবারো বলা হচ্ছে হামাস সেখানে ফিরে এসেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, তাদের কাছে ‘সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে, হামাস যোদ্ধারা সেখানে পুনরায় সংগঠিত হয়েছেন।
নতুন করে ভয়াবহ যুদ্ধের মাঝখানে পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন ফিলিস্তিনিরা। এতে তীব্র মানবিক সংকটের বিষয়টি যেমন টের পাওয়া যায়, এটিও স্পষ্ট হয়, হামাস এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, এ থেকে বোঝা যায়, সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে মোকাবিলা করার জন্য কতটা বিস্তৃত কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন। গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী শাসনব্যবস্থা নিয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনাও জরুরি বলে মত তাদের।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, তারা আল-শিফায় চলমান লড়াইয়ে ‘১৪০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসীকে (যোদ্ধা)’ হত্যা করেছে, গ্রেপ্তার করেছে প্রায় ৬০০ জনকে। যার মধ্যে হামাসের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কমান্ডার রয়েছেন। ইসলামিক জিহাদের কয়েকজনও আছেন তাদের সঙ্গে।
দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার কথাও জানিয়েছে আইডিএফ। ইসরায়েলি প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আল-শিফায় পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেছেন। কেউ কেউ তাদের পরিবারকেও হাসপাতালটিতে নিয়ে গেছেন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রের ভাণ্ডার এবং বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছে আইডিএফ।
তবে হামাস এসবই অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, তাদের যোদ্ধারা সেখানে অবস্থান করছেন না। হাসপাতালে থাকা আহত রোগী এবং বাস্তুচ্যুত লোকেরাই হামলায় নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেন, বন্দুকযুদ্ধ এবং ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোগী, চিকিৎসক এবং সেখানে আশ্রিত শত শত লোকের জীবন বিপন্ন।
বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে যোগাযোগব্যবস্থা খুবই সীমিত করে আনা হয়েছে। এতে ঘটনাস্থলে অবস্থানরত চিকিত্সক ও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ দুরূহ হয়ে পড়েছে।
গত নভেম্বরে, গাজার কেন্দ্রস্থলে আল-শিফার কাছে ইসরায়েলের ট্যাংক নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
সে সময় ব্যাপক তল্লাশি চালায় ইসরায়েলি সৈন্যরা। পরে তারা মাটির নিচে থাকা একটি বড় টানেল উড়িয়ে দেয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছিল, গাজা উপত্যকার উত্তরে হামাসের আঞ্চলিক ব্রিগেড এবং ব্যাটালিয়নগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, অল্পদিনের মধ্যেই খবর আসে, ছোট ছোট দলে পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে তারা।
হামাস নিঃসন্দেহে এই যুদ্ধে মারাত্মকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এরপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থেকে শাসনক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন গোষ্ঠীটির সদস্যরা।
আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলের পুনরায় সামরিক পদক্ষেপ দেখে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান চলতি সপ্তাহে বলেছেন, ইসরায়েল একবার শিফাকে হামাসমুক্ত করলো। হামাস শিফায় ফিরে এলো আবার। তাহলে, হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান কতটা টেকসই হলো সেটিই প্রশ্ন।
গাজায় হামাস শাসনের বিকল্প নিয়ে আসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে চাপ দিয়ে আসছে। ইসরায়েল এর আগে বলেছিল, তারা পিএ বা হামাসের সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই গাজার নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে।
এখন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন বলছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা হামাসের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন ফিলিস্তিনি নেতা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে ত্রাণ বিতরণের একটি পরিকল্পনা নীরবেই তৈরি করছে। তারা ধারণা করছে, পরবর্তীতে একটি ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষ তৈরিতে এটি ভূমিকা রাখতে পারে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের তথ্য, শিফা হাসপাতালে অভিযান কয়েক দিন ধরে চলতে পারে। এর সঙ্গে রাফায় চালানো সামরিক অভিযানের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসরায়েল জোর দিয়ে বলছে, হামাসকে পরাজিত করতে হলে রাফায় অভিযান চালিয়ে যেতে হবে তাদের।
বিবিসি অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৪
আরএইচ