বরগুনা: বরগুনা কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কার্যনির্বাহী কমিটিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ, অর্থ লুটপাটে জড়িয়ে পড়েছেন সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা।
এই সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আর এই দুর্নীতির নায়ক হিসেবে রয়েছে সদর উপজেলা ও জেলা সমবায় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ফলে সমিতির সাধারণ সদস্যরা বিপাকে পড়ছেন।
২০১০ সালে বরগুনা পৌরশহর কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড (৭১ বিডি ০৮/১২/২০১০) নামে উপজেলা সমবায় অফিস থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত হন বরগুনা কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীরা।
জেলা সমবায় অফিসে প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি তাই অবৈধ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক কোষাধ্যক্ষ কতৃক বে-আইনি কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
এর পর চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর অভিযোগে বলা হয় সদ্য ভুয়া নির্বাচন হালনাগাদ স্থগিত করতে হবে।
২৪ নভেম্বর এই কমিটির সহ-সভাপতি ইউনুস সিকদারের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বিধি মোতাবেক কোনো হিসাব সাধারণ সদস্যদের দিচ্ছেন না। তাই সঠিকভাবে সব হিসাব সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।
ওই নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ ইউনুস, জাকির ও জাফরে স্বাক্ষরে অভিযোগ করা হয়, বিগত ৩ বছরের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব কমিটি কিংবা সাধারণ সদস্যদের কাছে দেওয়া হয়নি।
তারা বলেন, ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বর্তমান কমিটি। তাই অর্থ সঠিক হিসাব দিয়ে তারপর পরবর্তী নির্বাচন দিতে হবে।
এতোগুলো অভিযোগের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সমবায় অফিস। এমনকি কোনো ধরনের তদন্তও করেনি জেলা/উপজেলা সমবায় অফিস।
এসব অভিযোগের বিষয় আমলে না নিয়ে পুনরায় চলতি বছরের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের পায়তারা করেছে সমবায় অফিস এবং আগের কমিটি।
জানা যায়, সদস্যদের কাছে সমবায় আইন ও বিধি মোতাবেক ভোটার তালিকাসহ নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি পৌঁছানো হয়নি। ভোটার তালিকায়ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি ও তফসিলের সঙ্গে নির্বাচনের তারিখের কোনো মিল নেই।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আল-আমিনের কাছে অভিযোগ করা হলে তিনি শুনানির নামে বার বার সময় ক্ষেপণ করছেন।
অভিযোগ পাওয়া যায়, বর্তমানে সদর সমবায় অফিসের সহকারী পরিদর্শক মো.মিরন মিয়া, মো.ইসমাইল ও জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক নাজমুল হাসানের সহযোগিতায় অবৈধভাবে বর্তমানের নির্বাচন সম্পন্ন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
ব্যবসায়ী মো.জাকির মোল্লা গং বলেন, ইতিমধ্যে সদস্যদের পূর্বের জমা ১৫ লাখ টাকার হদিস নাই এবং বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে গত তিন বছর যাবত প্রতিদিন সঞ্চয় বাবদ চার হাজার টাকা করে প্রায় ২০ লাখ টাকা আদায় করেছে।
বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎসহ নতুন সদস্য ভর্তির অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান কমিটির লোকজন ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের এনে সদস্য করা হয়েছে, যারা কেউ ব্যবসায়ী নয়। এছাড়াও তারা পুরাতন সদস্য থেকে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়েছে।
সমিতির শুরুতে মাত্র ১০২ জন সদস্য নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে কতজন সদস্য এবং সমিতির অ্যাকাউন্টে কতো টাকা আছে তা কারোরই জানা নাই।
সমিতির অধিকাংশ সদস্যদের দাবি, সঠিক সদস্য সংখ্যা ও ভোটার তালিকা এবং তাদের সঞ্চয়ের সঠিক হিসাব প্রকাশ করে তারপর পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে, অন্যথায় এ নির্বাচন আমরা চাই না।
এ বিষয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি আল-আমিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি পালিয়ে বেড়ান।
সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জাফর সাদিক বলেন, আমাদের কাছে কেউ এখনো কোন অভিযোগ করেনি, আর আমার জানা মতে বরগুনা কাঁচাবাজার সমবায় সমিতিতে কোনো দুর্নীতি নাই।
নির্বাচন বন্ধের বিষয় তিনি বলেন, নির্বাচন বন্ধের কোন ক্ষমতা আমি কিংবা জেলা অফিসেরও নাই। নির্বাচন বন্ধ করতে চাইলে সদস্যদের মধ্যে থেকে কমপক্ষে ১০ শতাংশ লোকের স্বাক্ষরে ডিসির কাছে আবেদন করতে হবে।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, আমি এতোদিন ব্যস্ত থাকায় এ ব্যাপারে তেমন পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তবে আগামী ২২ ডিসেম্বর আমি সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের বিষয় তদন্ত শুরু করব।
বর্তমান কমিটির ব্যাপারে তিনি বলেন, বর্তমান সভাপতি আল আমিন তো সদস্য-ই না। তাহলে তিনি সভাপতি হলেন কীভাবে?
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে সমবায় আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করলেও তিনি তা আমলে নিচ্ছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২২
এসএএইচ