হবিগঞ্জ: সাড়ে তিন বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বাবা মারা যান। সোমবার সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মা।
শোকাবহ এ দৃশ্যটি দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী শিখা রাণী দাশের বাড়িতে গেলে।
শিখা দাশের মরদেহ রাখা খাটিয়ার ওপরে বসে আহাজারি করছিল তার মেয়ে জ্যোতি কর্ণ দাশ অর্পি (২০) ও শীর্ষ কর্ণা দাশ অদ্রি (১৬)। তারা বার বার বলে উঠছিল, ‘আমরা এখন কাকে মা বলে ডাকব, আমাদের তো বাবাও নেই, এখন কে দেখে রাখবে আমাদের।
অর্পি সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে অধ্যয়নরত ও অদ্রি হবিগঞ্জ বসন্তকুমারী গোপাল চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
শিখা গত শনিবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ জেলা শহর থেকে অটোরিকশায় করে বানিয়াচং উপজেলার ইকরাম গ্রামে তার বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। পাতারিয়া এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে শিখা গুরুতর আহত হন। পরে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ আজ (সোমবার) ভোরে সিলেট থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
শিখার স্বামীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক গ্রামে। তার স্বামী ফান্দাউক পন্ডিতরম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অমল চন্দ্র দাশ। সাড়ে তিন বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি।
নিহত শিখার সহকর্মী হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী শামীমা শাম্মী বলেন, বাবাকে হারানোর সাড়ে তিন বছরের মাথায় মাকে হারিয়ে অর্পি ও অদ্রি পাগল প্রায়। কোনোভাবেই তাদের কান্না থামানো যাচ্ছে না। মায়ের মরদেহ যখন শ্মশানে নেওয়া হচ্ছিল তখন তাদের কান্না আরও বেড়ে যায়। তারা কখনও বুক ফাটিয়ে কান্না করছে, কখনও নির্বাক থাকছে। এ দৃশ্য সহ্য করার মতো না।
তিনি আরও বলেন, ‘শিখা দাশ তার মেয়েদের অনেক ভালোবাসতেন। সাড়ে তিন ধরে তিনি কখনও তাদের বাবার অভাব বুঝতে দেননি। বড় মেয়ে অর্পিকে প্রথম ঢাকায় ডেন্টাল মেডিকেলে ভর্তি করেছিলেন। শারীরিক সমস্যার কারণে পরে সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটিতে এনে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি করেন। দুটি মেয়ের কান্নায় এলাকাবাসীও তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। ’
** সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সেই পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর মৃত্যু
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
আরএ