ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

তীরে ভিড়েছে ট্রলার, জেলেরা গুছিয়ে নিচ্ছে জাল

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
তীরে ভিড়েছে ট্রলার, জেলেরা গুছিয়ে নিচ্ছে জাল

লক্ষ্মীপুর: জাটকা সংরক্ষণে ১লা মার্চ থেকে মেঘনায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে আগামী ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত।

তাই নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগ থেকে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর জেলেরা মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে ঘাটে চলে এসেছে। নদীর তীরে বসে মাছ শিকারের আনুষঙ্গিক মালামাল এবং জাল মেরামত করে গুছিয়ে নিচ্ছেন জেলেরা।  

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী তীরবর্তী চররমনী মোহনের মজুচৌধুরীর হাট, চর আলী হাসান, মাতাব্বর হাট ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।  

চর আলী হাসান গ্রামের জেলে আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার দুই দিন আগেই নদী থেকে চলে এসেছি। মাছ ধরার ট্রলার মেঘনা নদীর সংযোগ খাল ক্যাম্পের খালে নিরাপদে নোঙর করে রেখেছি। আগামী দুই মাস ট্রলার খালের মধ্যে নোঙর করা থাকবে। মাছ ধরার জালগুলো মেরামত করে নিচ্ছি। এছাড়া ট্রলারের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাড়িতে নিয়ে রেখে দেব।  

তিনি জানান, তাদের এলাকার বেশিরভাগ জেলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে। এছাড়া সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল পাওয়ার কথাও জানান তিনি।  

একই ঘাটের জাল মেরামত করছেন জেলে খোরশেদ আলম (৪০)। সদর উপজেলার শাকচর এলাকার বাসিন্দা তিনি। খোরশেদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি যেকোন অভিযান আমরা মেনে চলি। নিষেধাজ্ঞার সময় আমরা নদীতে যাই না। ছোটবেলা থেকে জেলে পেশায় আছি, কিন্তু আজও জেলে তালিকায় আমার নাম ওঠেনি। দুই মাসের অভিযানে তালিকাভুক্ত জেলেরা চাল পাবে, কিন্তু চাল সহায়তা না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে আমাকে কষ্ট করতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, শীত ও শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নদীতে তেমন একটা মাছ পাওয়া যায়নি। তাই এতোদিন যে মাছ ধরেছি, জ্বালানি তেল ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা ছিল না। এখন খালি হাতে বাড়ি যাচ্ছি। দুই মাস কীভাবে চলবো জানি না? 

একই এলাকার বয়োবৃদ্ধ জেলে জাহের মাতবর বলেন, ২০ বছর ধরে মাছ ধরে খাই। কোনো সরকারি সহায়তা পাইনি। ঘরে স্ত্রী এবং দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। অভিযানের সময় তাদের নিয়ে হিমশিম খেতে হয়।  

চররমনী মোহনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য দুলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মাতাব্বর হাট এলাকার জেলে পল্লিতে প্রায় আড়াইশ জেলে এবং ৬০-৭০টি মাছ ধরা ট্রলার রয়েছে। এরা মেঘনা নদীর গভীর অংশে এবং সাগরে মাছ ধরে। নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় তাদের এলাকার জেলেরা ট্রলার ও জাল নিয়ে বাড়ি চলে এসেছে।  

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বাংলানিউজকে বলেন, সদর উপজেলার ৩ হাজার ৭৬৭ জন জেলেকে ভিজিএফ এর আওতায় ৪০ কেজি করে চার মাস চাল দেওয়া হবে। কিছু কিছু ইউনিয়নে দুই ধাপে ৮০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। সদর উপজেলার প্রায় সাত হাজার জেলে। এদের মধ্যে যারা মেঘনায় ইলিশ ধরে, তাদের মধ্যে থেকে জেলেদের চাল দেওয়া হয়।  

উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুর উপজেলার ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীর একশ কিলোমিটার এলাকাকে জাটকা-ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে মৎস্য অধিদফতর। মার্চ এবং এপ্রিল দুই মাস অভয়াশ্রমে জাটকা-ইলিশের বিচরণ থাকে। অবাধে যাতে জাটকা বড় ইলিশে পরিণত হতে পারে, তাই দুই মাস নদীতে সব রকম মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে।  

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে সব জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে নামবে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়। আইন অমান্যকারী জেলেদের মৎস্য আইনে এক থেকে দুই বছরের জেল, অনাদায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩

আরএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।