ঢাকা: রাজধানী ব্যস্ততম এলাকা নতুন বাজারের ফুটপাতে এক নারী প্রসব বেদনায় ছটফট করছিলেন। খবর পেয়ে ছুটে যান পাশেই সড়কে দায়িত্বরত গুলশান ট্রাফিক বিভাগের নারী সার্জেন্ট সদস্য মোর্শেদা।
অন্য এক নারী কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন সার্জেন্ট মোর্শেদা। বাস কাউন্টার থেকে ছাতা এনে গড়ে তোলেন বেষ্টনী। কিছু সময় পর ফুটপাতেই স্বাভাবিকভাবে এক ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দেন ওই নারী।
শুধু তাই নয়, সন্তান জন্ম নেওয়ার পর নাড়ি কাটতে ওই নারী ও নবজাতককে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন সার্জেন্ট মোর্শেদা। বর্তমানে মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছেন।
শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় এভাবেই সড়কে প্রসব বেদনায় ছটফট করতে থাকা এক নারীর দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন আরেক নারী পুলিশ সদস্য।
পুলিশের গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হাফিজুর রহমান ঘটনার সময়ের কয়েকটি ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
এডিসি হাফিজুর রহমান তার পোস্টে লিখেছেন, প্রতিদিনের মতো ট্রাফিক ডিউটি করছিলেন সার্জেন্ট মোর্শেদা। দায়িত্বরত অবস্থায় ঢাকার চাকা পরিবহন কাউন্টারের একজন স্টাফ তাকে বলেন, পাশেই একজন নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এ কথা শোনার পর একটুও দেরি না করে তিনি দ্রুত ট্রাফিক কনস্টেবল তানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ফুটওভার ব্রিজ পার হয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান সেই নারীর প্রসব ব্যথা উঠছে। তিনি অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে রাস্তার পাশে মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন।
আশপাশে কোনো ভবনও ছিল না যন্ত্রণাকাতর ওই নারীকে নেওয়ার মতো। এ অবস্থা দেখে সার্জেন্ট মোর্শেদা ও কনস্টেবল তানিয়া দ্রুত বাস কাউন্টার থেকে কয়েকটি ছাতা নিয়ে আসেন।
এ সময় চারপাশ ঘিরে দিয়ে এবং ওই নারীকে বাচ্চা প্রসবে সহযোগিতা করেন। কিছুক্ষণ পরে একটা ফুটফুটে বাচ্চা জন্ম নেয়। কিন্তু তখনও নবজাতকের নাড়ি কাটা হয়নি। সার্জেন্ট মোর্শেদা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে দ্রুত জরুরি অ্যাম্বুলেন্স এনে নবজাতকসহ প্রসূতি মাকে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে ওই হাসপাতালে নবজাতক ও মা দুজনই সুস্থ আছেন।
এ রকম মহানুভবতা ও ভালো কাজের জন্য সার্জেন্ট মোর্শেদা ও কনস্টেবল তানিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখা হাফিজুর রহমানের সেই পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। আর তাৎক্ষণিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশের দুই নারী সদস্য।
এ বিষয়ে সার্জেন্ট মোর্শেদা বলেন, আমি সড়কের যানজট কমানো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এর মধ্যে এক ব্যক্তি এসে জানাল নতুন বাজারে ফুটওভার ব্রিজের নিচে একজন নারী অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। আমি দ্রুত ফুটওভার ব্রিজ পার হয়ে তার কাছে যাই।
যাওয়ার পর তাকে আগলে ধরি। এক পথচারী নারীকে সহায়তা করতে অনুরোধ করি। অল্প সময়ের মধ্যেই সন্তান প্রসব হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্স কল করে নবজাতক ও মাকে পাশের উপশম হেলথ পয়েন্টে পাঠাই। বর্তমানে মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
পিএম/আরবি