ঢাকা: জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে নদীর অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে র্যালি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এ আয়োজন করে।
এতে সহ-আয়োজক ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন, গ্রীন ভয়েস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের।
বক্তব্য রাখেন বাপার সাধারণ সম্পাদক, শরীফ জামিল, বাপা নদী ও জলাশয় কর্মসূচি কমিটির সদস্য সচিব ড. হালিম দাদ খান, বাপা নির্বাহী সদস্য ইবনুল সাঈদ রানা, আব্দুল করিম কিম, সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি জাহাঙ্গীর আদেল, বিআইডব্লিউটিএর সুপারভাইজার সেলিম হোসেন, বাপা সদস্য হাজি আনছার আলী এবং গ্রীন ভয়েস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আতকিয়া জাহান প্রমুখ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, দেশের নদী রক্ষায় এখনি যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে দেশের নদীগুলো বিলীন হয়ে যাবে। দেশে নদী রক্ষার অনেক আইন আছে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে। দেশের নদী উন্নয়নের প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সেই জন্য সরকারের পাশাপাশি বাপাসহ দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মিহির বিশ্বাস বলেন, যারা নদীগুলোকে দখল ও দূষণের মাধ্যমে গ্রাস করছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আগে নদী তার পরে নগরায়ন। নদীকে মেরে নগরায়ন চাইনা।
বুড়িগঙ্গার দূষণের ভয়াবহতা কত তা দেখার জন্য তিনি মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের বুড়িগঙ্গা নদীতে জাহাজের উপরে একটি সভা করার দাবী জানান।
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, নদীকৃত্য দিবসের অর্থ হচ্ছে নদীর জন্য কিছু করা। নদীকে বাঁচানো মানে নিজেকে বাঁচানো। নদীমাতৃক এইদেশের নদীটিকে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে নিজেদের টিটে থাকার পূর্বশর্ত। আজ একটি ব-দ্বীপ অঞ্চলের নদী হিসাবে আমাদের একেকটি নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছোট নদী, ঢাল, খাল, প্লাবন অঞ্চল ও অন্যান্য জলাশয়সমূহ সম্পূর্ণরুপে বিলীন হতে চলেছে। সঠিকভাবে নদীর সীমানা চিহ্নিত না করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার মাধ্যমে দখলদারদের বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদী ও নদীসমূহের সঙ্গে সম্পৃক্ত খাল, প্লাবন অঞ্চল ও জলাশয়সমূহ বেপরোয়াভাবে ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। সর্বোচ্চ আদালত নদী কমিশন ও নদী কমিশন আইনকে শক্তিশালী করা, দূষণকারী শিল্পে ঋণ না দেয়াসহ অনেক মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সব উল্টো চিত্র দেখা যায়। নদী কখনো মরেনা, একে মেরে ফেলা হয়। আর নদী মারা গেলে সবচেয়ে কষ্টে থাকে গরিব ও নিন্ম আয়ের মানুষ। তিনি নদী পাড়ের মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নদী রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আলমগীর কবির নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করে প্রবাহমান করাসহ সকল নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার জোর দাবি জানান।
ড. হালিম দাদ খান বলেন, জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে নদীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনয়ি পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাহাঙ্গীর আদেল বলেন, দেশের নদী ও পরিবেশ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য দেশের স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে এসমস্ত কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান।
ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, ঢাকার চারটি নদী কেন আজ ওয়েষ্ট ডিস্পোজালে পরিণত হয়েছে। এর পেছনে কারা দায়ী তাদের বিচারের দাবি জানান।
এছাড়াও দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে আজ বগুড়া, চাটমোহর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ভালুকা, মোংলা, হবিগঞ্জ ও মহেশখালীতে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
আরকেআর/এসএ