ঢাকা, সোমবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দ্বাদশ আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
দ্বাদশ আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণ

ঢাকা: অনুষ্ঠিত হলো দ্বাদশ বাংলা অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণী। এতে পুরস্কৃত হয়েছে সারা দেশের বিভিন্ন ইংরেজি মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সন স্কুলের ১৪৬ জন শিক্ষার্থী।

শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

 বাংলা অলিম্পিয়াডে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ২৯ জন, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে ৪৪ জন এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে ৭৩ জন।

প্রতিবছরের মতো এবারও ইংরেজি মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সন স্কুলের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উত্তরায় স্কুল প্রাঙ্গণে দ্বাদশ আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত শুরু হয়। দেশের ৭০টি স্কুলের ৯০টি শাখা এ বছর বাংলা অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেছে। বাংলা অলিম্পিয়াডের যুগপূর্তিতে এ বছরই প্রথমবারের মতো সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।

 

শনিবার দুপুর সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলা অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং জাতীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মাশরাফি বিন মর্তুজা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ।  

এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলা অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক কামরুল আহসান এবং ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল রোকসানা জারিন এবং ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশে’র চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ জলদোশভ।  

অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম।

ভাষার মাসে দেশের ইংরেজি মাধ্যম এবং ইংরেজি ভার্সন স্কুলগুলোর অংশগ্রহণে বাংলা ভাষা বিষয়ক সর্ববৃহৎ এ প্রতিযোগিতা রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ করে। প্রতিযোগীরা এবার রচনা লেখা, আবৃত্তি, নাচ, গান, অঙ্কন, কুইজ এবং উপস্থিত বক্তৃতা বিষয়ে বয়সভেদে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে।

বাংলা অলিম্পিয়াতে সংগীত বিভাগের প্রতিযোগিতায় জয়ী শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে দুপুর ১২টায় এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। বক্তৃতা, পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি ছিল আবৃত্তি, নাচ ও গানের মনোজ্ঞ পরিবেশনা। বাংলা অলিম্পিয়াড জয়ী ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনাগুলো ছিল বেশ উপভোগ্য।  

অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলা অলিম্পিয়াড ইংরেজি মাধ্যম এবং ইংরেজি ভার্সন স্কুলগুলোকে নিয়ে অসাধারণ আয়োজন করেছে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা যতটা সহজে ইংরেজি শিখতে পারে, বাংলাটা সাধারণত তাদের এতটা ভালো হয় না। কবি জীবনানন্দ দাশের মা কবি কুসুম কুমারী দাশ লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। ’ বাংলা অলিম্পিয়াডে এসে মনে হচ্ছে, এখানকার ছেলে-মেয়েরা কথায় নয়, কাজে বড় হয়েছে। ক্লাসের পড়াশুনা যথেষ্ট নয়, শিক্ষার্থীদের আরও নানা কাজকর্মে যুক্ত হতে হবে। সবাই মিলে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, আমি বাংলায় কথা বলি, বাংলা আমার অহংকার। খেলাধুলার জন্য নানা দেশে গিয়ে বাধ্য হয়ে ইংরেজি বলি। কিন্তু বাংলা আমার সবচেয়ে বড় অহংকারের জায়গা। আবারো জন্মগ্রহণের সুযোগ থাকলে বার বার নয়, হাজারবার আমি বাংলায় জন্ম নিতে চাইবো।

অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ-এর প্রিন্সিপাল রোকসানা জারিন বলেন, প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় বাংলা ভাষাচর্চার এ প্রতিযোগিতার এক যুগপূর্তির আয়োজন করতে পেরে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ আনন্দিত ও গর্বিত। আমরা মনে করি, এক যুগ ধরে এতবড় একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আমাদের স্কুল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে ২৯ জন শিক্ষার্থী। বাংলা কুইজ বিভাগে এ গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছে বিএফ শাহীন ইংলিশ মিডিয়াম কলেজের শিক্ষার্থী অর্ণব দাস, বি গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জনকারী আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রুকাইয়া তাসনিম রাইসা, সি গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জনকারী হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী সানিলা নাঈর। অঙ্কনে এ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী রণ বিজয় ধর, বি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাহসিন তারান্নুম আহির, সি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ওয়ার্ড ব্রিজ স্কুলের শিক্ষার্থী তাসিন তাবাসসুম। রচনা প্রতিযোগিতায় এ গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ- উত্তরা শাখার শিক্ষার্থী নাফিসা শিকদার, বি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী দেবাঞ্জনা বড়ুয়া, সি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে প্লে পেন স্কুলের শিক্ষার্থী সাফওয়ান ইনতিশার। উপস্থিত বক্তৃতায় এ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মুয়াজ আজাদ। নৃত্য প্রতিযোগিতায় এ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে নেভি এঙ্করেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ।  

কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় এ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সাউথ ব্রিজ স্কুলের শিক্ষার্থী আরিয়া ইয়াশারাহ রায়হান, বি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে আব্দুল কাদের মোল্লা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী কল্যাণী বর্মন রুথ, সি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ইবতিদা হোসাইন। সংগীত প্রতিযোগিতায় এ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী নাদিদ ইয়াসার, বি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে প্লে পেন স্কুলের শিক্ষার্থী আর্নাভাজ হায়াত চৌধুরী, সি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাতিন শারহা, ডি ক্যাটেগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সাজিয়া মোহাম্মদ নহু এবং ই ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী ফিওনা ভান্ডারী।

গত ১o ডিসেম্বর থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া দ্বাদশ বাংলা অলিম্পিয়াড উপলক্ষে ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি মহা আড়ম্বরে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ প্রাঙ্গণে দ্বাদশ বাংলা অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়।  

প্রসঙ্গত, ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি এ স্কুলটি সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিভিত্তিক চর্চায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে।
  
খেলাধুলা, বিজ্ঞানসহ নানা বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে। এরই অংশ হিসেবে গত ১২ বছর ধরে এ স্কুলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩ 
এইচএমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।