ঢাকা: সর্বপ্রথম চাই রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমন হতে হবে, যাতে বাংলাদেশে কোনোভাবেই আর স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করতে পারে। রাজনৈতিক সংস্কারের ব্যবস্থা যদি না হয়, তাহলে আজকে যে ছাত্রসমাজেরে কথা বলছি, ক্ষমতায় গিয়ে তারাও স্বৈরাচারী আকার ধারণ করবে বলে মন্তব্য করেছেন রামরুর চেয়ারম্যান ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. তাসনিম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, আজকে তারা ক্ষমতায় আসতে চায়, কাল সে স্বৈরাচারী আকার ধারণ করবে, যদি রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন না আনি। মৌলিক পরিবর্তনের এক নম্বর জায়গা হলো, ক্ষমতা কখনো এক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত হতে দেওয়া উচিত নয়।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত ‘বিজয় দিবস: নতুন প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তাসনিম সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যিনি দলের প্রধান, তিনিই পার্লামেন্টের প্রধান বা তিনিই প্রধান নির্বাহী। সংবিধানের যে পরিবর্তন আসছে, সেখানে নিশ্চিত করতে হবে এখানে তিন ব্যক্তি আলাদা হবেন। অর্থাৎ ক্ষমতার ভাগ হবে। দ্বিতীয় আরও একটি বিষয়, যেটা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের বসা উচিত। সেটা হলো, একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ক্ষমতা বিভাজন আসতে পারে।
এবারের আন্দোলনে নারী এগিয়ে এসেও মূল্যায়িত হয়নি উল্লেখ করে তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, আন্দোলনে নারী যদি না বলতো—সামনে স্বাধীনতা, পেছনে পুলিশ, আমি শুধু সামনেই যাব; তাহলে বিপ্লব কতটা সার্থক হতো তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সেই জায়গা থেকে বলতে চাই, ৫০টি নারী সংসদ সদস্যের যে আসন আছে, সেটা বাতিল করতে হবে। মোট আসনের ৩৩ শতাংশ রাজনৈতিক দলের নমিনেশনের মাধমে নারীকে আসতে হবে। নারীকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি, তার প্রমাণ হলো, আমাদের ছাত্রজনতা যাদের আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অংশগ্রহণ করতে দিয়েছি, তাদের দলে কোনো নারী অংশগ্রহণ করতে দেইনি। তার মানে আমিও ওই সমাজে আছি। যে সমাজেরে কাঠামো নিয়ে আমি প্রশ্ন করছি। এ জন্য নিয়মাতান্ত্রিকভাবে নারীকে রাজনীতিতে আনতে হবে।
যে কাজ করতে পারে, যার জ্ঞান আছে, তার রাজনীতিতে আসার জায়গা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের খুব ইয়াং আর খুব বয়স্ক লোকজন উপদেষ্টা পরিষদে আছে। দৌড়াতে পারা লোকগুলোকে রাজনীতিতে আনতে হলে একেবারে প্রাথমিক থেকে আনতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনতে হবে।
তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, দূষিত রাজনীতির বাইরে এখন আমরা কেউ নেই। না আছি শিক্ষক, না আছে সংবাদপত্র, না আছে রাজনীতিবিদ। আমরা সেই রাজনীতি চাই, যা তোষণের রাজনীতি নয়। আমরা চাই সেই রাজনীতি, যা অংশগ্রহণমূলক। সংবাদপত্রের ভূমিকা হওয়া উচিত, যা সংবাদপত্রের কাজ। সিভিল সমাজের কাজ দলের লেজুড়বৃত্তি হওয়া উচিত নয়। যার ভূমিকা হওয়া উচিত মুক্তকণ্ঠে জনগণের সাথে রাষ্ট্রকে বিট করা। সেই বিট করার ক্ষেত্রে আমরা সিভিল সমাজকে পাইনি, দলীয় লোক পাই। যেটা সংজ্ঞা অনুযায়ী সিভিল সমাজ আর থাকে না।
দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্বে করেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাদের গণি চৌধুরী। এতে রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিনীতিবিদ, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ