ঢাকা: ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ও বেলজিয়ামের মধ্যে প্রথম দ্বিপাক্ষিক (বাইল্যাটারাল) কনসাল্টেশনস বেলজিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পশ্চিম ইউরোপ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) কাজী রাসেল পারভেজ এবং বেলজিয়াম প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলী) রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান।
শুক্রবার ( ৫ মে) ব্রাসেলসের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক বিষয়াবলীর আওতায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকট, আন্তর্জাতিক সংস্থায় নির্বাচন, বাংলাদেশ-ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সম্পর্ক, ইন্দো-প্যাসিফিক ও ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হয়।
আলোচনার শুরুতে বেলজিয়াম প্রতিনিধিদলের প্রধান রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান বেলজিয়ান রাণীর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরে বলেন, এ সফর বাংলাদেশ ও বেলজিয়ামের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-বেলজিয়াম সম্পর্ক ক্লাসিকাল অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিবর্তে বর্তমানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগভিত্তিক সম্পর্কে পরিণত হয়েছে।
এ সময় তিনি নবায়নযোগ্য শক্তি, ড্রেজিং, সমুদ্র অর্থনীতিসহ বিভিন্নখাতে বাংলাদেশের সঙ্গে বেলজিয়ামের কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান কাজী রাসেল পারভেজ বাংলাদেশে চলমান অর্থনেতিক উন্নয়ন সম্পর্কে তুলে ধরে বাংলাদেশে আরো বেলজিয়ান বিনিয়োগের অনুরোধ জানান।
দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে বাণিজ্য আরো বাড়ানো সম্ভব। বাংলাদেশে বিনিয়োগ সুবিধা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তিনি বেলজিয়ামকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, এনার্জি, জলবায়ু পরিবর্তন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নতুন বিনিয়োগের অনুরোধ জানান।
বেলজিয়ামের জুলস বোর্দে ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশের জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মধ্যে ক্যান্সার গবেষণা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা হয় এবং এটি শীগগিরই স্বাক্ষরের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
এছাড়া বেলজিয়ামের এগমন্ট ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও দু’পক্ষ একমত হন।
দীর্ঘ বছর ধরে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের জন্য কুরম্যান বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করে বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বেলজিয়াম তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
এ সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান রোহিঙ্গা সংকটের সাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বেলজিয়ামের রাজনৈতিক সমর্থন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য বেলজিয়ামকে ধন্যবাদ জানান।
রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টিতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ও বিচার আদালতে চলমান কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্যও অনুরোধ করেন।
বাইল্যাটারাল কনসাল্টেশনসে বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহসহ দূতাবাসের অন্যান্য কূটনীতিকগণ এবং বেলজিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকগণ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেনের ব্রাসেলস সফরকালে বাইল্যাটারাল কনসাল্টেশনস অনুষ্ঠান সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৩,
টিআর/এসএএইচ