ফরিদপুর: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ফরিদপুর জেলার কর্মরত সাংবাদিকরা। একই সময় এ হত্যায় জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামও দেওয়া হয়।
শুক্রবার (১৬ জুন) দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে সাংবাদিকরা।
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, এটিএন বাংলা এবং এটিএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সোহেলের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন- সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক মফিজ ইমাম মিলন, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সাংবাদিক পান্না বালা, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট হারুন-অর-রশীদ।
এ সময় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে নির্যাতন, মামলা-হামলা ও হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়েছে। এটা দেশের সার্বভৌমত্বের ও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বড় হুমকি। কথায় কথায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা-মামলা ও হত্যা এটা চলতে পারে না। সরকারকে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
তারা বলেন, ফরিদপুরের সাংবাদিকরা আজ ঐক্যবদ্ধ। নাদিম হত্যার সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। এছাড়া সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের পাশে সরকারেরসহ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
বক্তারা এ নৃশংস হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামও বেধে দেন। তা না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন ফরিদপুর জেলার কর্মরত সাংবাদিকরা।
মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সাংবাদিকরা। বিক্ষোভ মিছিলে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। এ সময় তারা স্লোগান দিতে থাকেন- ‘ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই; নাদিম হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। ’
অন্যদের মধ্যে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও এনটিভির জেলা প্রতিনিধি সঞ্জিব দাস, প্রেসক্লাবের আরেক সহ-সভাপতি ও দৈনিক বাংলা'র প্রতিনিধি মাহবুব হোসেন পিয়াল, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক এবং যমুনা টিভি ও দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম হিমেল, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল২৪-এর সাংবাদিক হাসানুজ্জামান, বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক তমিজউদদীন তাজ, বাংলাদেশ বেতারের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম মনি, মাই টিভির প্রতিনিধি নাজিম বকাউল, মোহনা টিভির প্রতিনিধি আশিষ পোদ্দার বিমান, আনন্দ টিভির প্রতিনিধি এস এম মনিরুজ্জামান মনির, সময় টিভি ও দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি সুমন ইসলাম, দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিনিধি অভিজিৎ রায়, দৈনিক ভোরের কাগজের প্রতিনিধি বিভাষ দত্ত, ইনডিপেনডেন্ট টিভির প্রতিনিধি এস এম মাসুদুর রহমান তরুণ।
এছাড়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন জিটিভি প্রতিনিধি শেখ মনির হোসেন, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান রাসেল, গ্লোবাল টিভির প্রতিনিধি মো. আনিচুর রহমান, নাগরিক টিভির প্রতিনিধি মো. আজিজুল হক, দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি কাজী সবুজ, দৈনিক প্রথম আলোর আলোকচিত্রী আলিমুজ্জামান রনি, সাংবাদিক সেবানন্দ বিশ্বাস, সাংবাদিক ওয়ালী নেওয়াজ বাবু, সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক এস এম রুবেল, সাংবাদিক শ্রাবণ হাসান, রবিউল ইসলাম রাজিব, দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের প্রতিনিধি এস এম আকাশ, সাংবাদিক নিরঞ্জন মিত্র, রুবেল ইসলাম, সাংবাদিক হায়দার খান, এহসানুল হক, সাংবাদিক মানিক কুমার দাস, শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক আতিয়ার রহমান, সবুজ দাস, লাভলু মিয়া, অসীম কুমার দাস, টিটুল মোল্লা প্রমুখ।
গত বুধবার (১৪ জুন) রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর রাত ১২টার দিকে সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সাংবাদিকের মরদেহ রাতে তার নিজবাড়ি গরুহাটিতে নেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরের জামালপুর করেসপন্ডেন্ট ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি বকশিগঞ্জ উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে।
বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে নিউজ করার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি করেছেন নাদিমের স্বজনরা।
মৃত্যুর আগে নাদিম নিজেও হামলার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে গত ১০ মে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ নিয়ে বাংলানিউজে ‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ১৪ মে তার স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ শিরোনামে বাংলানিউজে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ২০ মে সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামী মাহমুদুল আলম বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার অথবা পদ থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। বাবু জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়েও বাংলানিউজে ‘আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
এর আগে, গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের নাদিমসহ চার সাংবাদিকের নামে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। ৩০ মে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
নিহত গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগমের অভিযোগ,ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে নাদিমের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে তাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই তাকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এরও আগে গত ১১ এপ্রিল হামলার শিকার হয়েছিলেন নাদিম। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের সমর্থকরা এ হামলা করেন। গত ১০ জানুয়ারি ‘বকশীগঞ্জে আ. লীগের কমিটিতে রাজাকারের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের জেরে হামলার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের গ্রুপের লোক বলেও নাদিমের পরিবারের অভিযোগ।
আরও পড়ুন
নাদিম হত্যাকাণ্ড
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
এসআরএস