ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বৃষ্টি বাগড়ায় ক্রেতা কম গাবতলীর হাটে, লোকসানে বেপারীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
বৃষ্টি বাগড়ায় ক্রেতা কম গাবতলীর হাটে, লোকসানে বেপারীরা

ঢাকা: সকাল থেকে কখনও গুড়ি গুড়ি, তো কখনো ঝুম বৃষ্টি। বিকেলে বৃষ্টি থামলেও কাদা পানিতে একাকার কোরবানির গরুর হাটগুলো।

বৃষ্টির এমন বাগড়ায় ঈদের আগে শেষ দিনেও জমেনি গাবতলী পশুর হাট। আসেনি প্রত্যাশিত ক্রেতা। তাই লোকসান গুনতে হচ্ছে এখানকার বিক্রেতাদের।

বুধবার (২৮ জুন) গাবতলী স্থায়ী গবাদি পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে কাদা পানিতে হাঁটার অবস্থা নেই। এর ভেতর ক্রেতার অপেক্ষায় পশু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিক্রেতারা। শেষ দিন অনুযায়ী প্রত্যাশিত ক্রেতা না থাকায় হাটে এখনও অর্ধেক গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছর ঈদের আগে শেষ দিনে হাটে হাঁটার মতো জায়গা থাকে না। কিন্তু এবার বৃষ্টির কারণে ক্রেতাই নেই। টুকটাক যারা আসছেন, তারাও ঠিকমতো দাম বলছেন না। তাই বাধ্য হয়ে লোকসানে পশু বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেকে আবার তাদের পশু বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

হাটের অস্থায়ী অংশে কথা হয় বেপারি তাহের উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কুষ্টিয়া থেকে ১৯টি গরু নিয়ে চারদিন আগে হাটে এসেছি। ভেবেছি শেষ দিন ভালো বেচা বিক্রি হবে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে উল্টো শেষ তিন মানুষই নেই। এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি গরু বিক্রি করেছি। দুইটি দেড় লাখ করে। একটি দুই লাখ ২০ হাজার টাকায়। তিনটি গরুতে একলাখ টাকা লস হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হাটে যারা আসছেন তারা গরুর দাম বলতে চাচ্ছেন না। তারা মনে করছেন গরুর দাম বেশি। কিন্তু গরুর খাবারসহ সব কিছুরই তো দাম বেড়েছে। তাহলে আমরা কম দামে কীভাবে বিক্রি করব? পরিস্থিতি যা, তাতে বাকি গরু ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে হয়তো। এই হাটে আর গরু বিক্রি করতে আসব না।

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে তিনটি গরু নিয়ে এসেছেন বেপারি হানিফ। দুইটি গরু গতকাল মঙ্গলবার বিক্রি করলেও, একটি গরু নিয়ে আজ সারাদিন বসে আছেন। তিনি বলেন, এই গরুটির দাম একলাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু মানুষ ৭০-৭৫ হাজার টাকার বেশি বলছে না। এতে তো খরচের টাকাই উঠে না। ৬৫ হাজার টাকায় এই গরু কিনেছি। এরপর আরও ছয় মাস পালন করেছি৷ ৭৫ হাজারে কি এই গরু বিক্রি করা যায়? বৃষ্টির কারণে যত সমস্যা হয়েছে।

মো. শরীফ মোল্লা নামের আরেক বেপারি বলেন, পাঁচটি গরু নিয়ে এসেছি। একটি ৮৫ হাজারে বিক্রি করেছি। বাকি চারটি এখনও বিক্রি করতে পারিনি। হাটের যে অবস্থা তাতে আর বিক্রির আশাও নেই। একটি গরু বিক্রি করে চারজন মানুষের আসা যাওয়ার খরচও ঠিকমতো উঠেনি।

পাবনা থেকে ২৫টি গরু নিয়ে এসেছিলেন বেপারি রোকন। তিনি বলেন, গত তিন দিনে ২৩টি গরু বিক্রি করেছি। দুইটি বাকি। চাহিদার তুলনায় গরু বেশি হওয়ায় এবং বৃষ্টির কারণে এবার হাট মন্দা যাচ্ছে। ব্যাপারিরা ঠিকমতো দামও তুলতে পারছে না।

নওগাঁ থেকে আসা বেপারি শিপন বলেন, শেষ দিনে যেখানে জমজমাট বেচাকেনা হওয়ার কথা, সেখানে বৃষ্টির কারণে ক্রেতাই নেই। ৯০টি গরু নিয়ে এসেছি। এখনো ছয়টি বিক্রি করা বাকি। কিন্তু মানুষ ঠিকমতো দামই বলছে না। গরু বেপারিদের এবার লোকসান হয়েছে।

তানজিল নামের এক ক্রেতা বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে ক্রেতা নেই। তাই অনেকে কম দামে গরু ছেড়ে দিচ্ছে। আমি এক লাখ তিন হাজার টাকায় মাঝারি আকারের একটি গরু কিনেছি।

ইবরাহীম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ দাম কিছুটা কম। ব্যাপারিরা দাম ছাড়তে শুরু করেছেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ক্রেতা নেই।

গাবতলী গবাদি পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিবার শেষ দিনে হাট জমে উঠে। বেচাবিক্রি হয়ে হাট পুরো খালি হয়ে যায়। তবে এবার বৃষ্টির কারণে ক্রেতা কম। হাটে এখনও অনেক হরু। বিক্রি না হওয়ায় অনেক বেপারী তাদের গরু-ছাগল ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত ১৫-২০ হাজার কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার মাঝারি ও ছোট আকারের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। বড়গুলো রয়ে গেছে। বৃষ্টি না হলে বেচাবিক্রি আরও বেশি হত। তবে এখনও রাত বাকি। দেখা যাক কি হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
এসসি/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।