ঢাকা, সোমবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

লাশটাই চান রমজানের মা, বারেকের ভাই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৩
লাশটাই চান রমজানের মা, বারেকের ভাই

নওগাঁ: সৌদি আরবের একটি আসবাবপত্রের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে দুজনের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলায়।

একজন হলেন জেলার আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়নের উদয়পুর মন্ডলপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে বারেক সরদার (৪৫)।

আরেকজন একই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের মৃত আজিজার প্রামাণিকের ছেলে রমজান আলী (৩৩)।

নিহতের পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সংসারের সচ্ছলতা আনতে পাঁচ বছর আগে ঋণ করে সৌদি আরবে পাড়ি জমান রমজান আলী। অন্যদিকে ২০০৬ সালে নিজের ভাগ্য বদলাতে কাজের সন্ধানে সৌদি আরবে পাড়ি জমান বারেক সরদার।  

তারা দুজনই সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের হুফুপ সানাইয়া এলাকায় আল-মানসুরা শিল্প এলাকায় একটি ফার্নিচার কারখানায় কর্মরত ছিলেন। শুক্রবার বিকেলে ওই কারখানায় আকস্মিক আগুন লাগে। কাঠের কারণে দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে আগুন।  

আগুনে কারখানার ভেতর আটকা পড়ে আব্দুল বারেক সরদার ও রমজান আলীসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। শনিবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর পৌঁছে নওগাঁয়। খবর পাওয়ার পর থেকে নিহতদের বাড়িতে চলছে মাতম।

তাদের দুজনেরই স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ বাতাস। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। স্বজনদের দাবি, দ্রুত মরদেহ দেশে এনে দাফনসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।  

বারেক সরদারের ভাতিজা নাহিদ সরদার বলেন, চাচার মৃত্যুর খবর ছোট দুই চাচা নিশ্চিত করেছেন। খবরটি শোনার পর থেকেই তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ভেঙে পড়েছে। এখন মরদেহ দেশে আনাটাই কষ্টকর। আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় খরচ করে মরদেহ আনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা পেলে চাচার লাশটি শেষবারের মতো তার স্ত্রী-সন্তানরা দেখতে পেতো।

বারেক সরদারের বড় ভাই শাহাদত হোসেন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল বারেক। তার মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়লো। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়েটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। ভাইয়ের লাশ শেষবারের মতো দেখতে পাব কি না, সেটা জানি না।  

অসহায় পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

রমজান আলীর মা রহিমা বেওয়া বলেন, ছয় মাসের ছুটি কাটিয়ে চার মাস আগে আবারও সৌদিতে গিয়েছিল আমার ছেলে। দুই দিন আগেও ভিডিওকলে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। ছেলের ব্যস্ততার কারণে আর কথা বলা হয়নি। ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। এখন লাশটা এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গাজিউর রহমান বলেন, সৌদি আরবের ফার্নিচার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে নওগাঁর দুজনের তথ্য আমরা পেয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করা হচ্ছে। সৌদি আরবের অ্যাম্বাসিতে আমার বন্ধু কর্মরত আছে। ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে মরদেহ দুটি ফিরিয়ে আনতে নিহতের স্বজনদের সহযোগিতা করব। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো রকম সহযোগিতা করার সুযোগ থাকলে তা করা হবে।  

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, সৌদিতে অগ্নিকাণ্ডে আমাদের উপজেলার দুজনের মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। তাদের মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪১ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।