ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘আবেগ দিয়ে জীবন চলে না’ চিরকুট লিখে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
‘আবেগ দিয়ে জীবন চলে না’ চিরকুট লিখে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা ফিরোজ মোল্যা

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ভবিষ্যতের চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছেন ফিরোজ মোল্যা নামে একাদশ শ্রেণির এক মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি বোয়ালমারী সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র।

গত ২০২২ সালে বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় ফিরোজ। মৃত্যুর আগে ফিরোজের লিখে যাওয়া একটি সুইসাইড নোট বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতেই ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।  

থানা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ফিরোজ (১৮) ও তার ছোটভাই ফাহিম (১২) উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামে নানা বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করত। শৈশবেই তাদের বাবা নিরুদ্দেশ হলে মা ফিরোজা বেগম তার বাবার বাড়ি চাপলডাঙ্গায় তাদের রেখে অন্যত্র বিয়ে করেন। নানা-নানির মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী এক মামাকে নিয়ে তারা নানাবাড়িতেই বসবাস করতেন। ফিরোজ পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে দন্ত চিকিৎসকের সহযোগী ও কখনো কখনো নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন।  


বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফিরোজ নানাবাড়ির পার্শ্ববর্তী মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন। পরে বসতঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আড়ার সঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন। বিষয়টি পরিবারের লোকজন টের পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।  

মৃত্যুর আগে ফিরোজের লেখা সুইসাইড নোটে তুলে ধরা হলো:

তিনি লেখে- "আমি জানি আমি কি করছি। জানি আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। কিন্তু, আমার কাছে যে আমার স্বপ্নগুলো অনেক দামি ছিল। হয়তো আমার জীবনের চেয়েও দামি। আমরা যেই সমাজে বসবাস করি সেই সমাজে স্বপ্ন পূরণ করতে অনেক টাকা; নয়তো মা-বাবা থাকা প্রয়োজন। যার কোনোটাই আমার কাছে নেই। আমি ওকে ভালোবাসতাম। আমার আবেগ মাখা কথাগুলো কারো বিবেকে লাগবে না, সেটা আমি জানি। আর আমি বোকা বলবো সেই সব মানুষদের যারা আমাকে একজন ভালো ছেলে ভাবতেন। আমি আসলে কখনোই ভালো ছিলাম না, শুধু ভালো থাকার অভিনয় করতাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। আর কোনো কষ্ট করতে ও পেতে চাই না। তাই এই পথ বেছে নিলাম। আমাকে সবাই ঘৃণা করলেও যেন ভুলে যায়, এটাই আমার শেষ ইচ্ছা! চির বিদায় সবাইকে। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। "

মরদেহ উদ্ধারকারী বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সরোয়ার হোসেন জানান, খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে বোয়ালমারী থানায় আনা হয়েছে। ঘটনাস্থল চাপলডাঙ্গা গ্রামের ফিরোজের বসতঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।