ঢাকা: আগামী ২০৪১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান ট্যাক্সেশন পলিসি ইমপ্রুভ করা প্রয়োজন জানিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ, প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, স্মার্ট ট্যাক্সেশন পলিসি ছাড়া আমাদের টেলিকম সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত গ্রোথ বাধাগ্রস্ত হবে।
রোববার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে টেলিকম খাতের কর পলিসি নিয়ে টিআরএনবি ও এমটব আয়োজিত ‘টেলিকম ট্যাক্সেশন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমাদের ২০৪১ সালের যে টার্গেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের। স্মার্ট ইকোনমি করতে গেলে, স্মার্ট সরকার ব্যবস্থা করতে গেলে, স্মার্ট নাগরিক করতে গেলে, স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা গড়তে গেলে একটা পলিসি ইমপ্রুভমেন্টের দরকার। যেটা আসলে স্মার্ট ট্যাক্সেশন পলিসি ছাড়া আমাদের এ সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত যে গ্রোথ তা বাধাগ্রস্ত হবে।
টেলিকম খাতের সংশ্লিষ্টরা এ খাতের বড় বাধা হিসেবে করপোরেট ট্যাক্স এবং অন্যান্য ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব করেন। এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী পলক, যৌক্তিক পর্যায়ে যাতে করপোরেট ট্যাক্স থাকে সেটির জন্য এবং টেলিকম খাতের ট্যাক্সেশন নিয়ে অর্থমন্ত্রী এবং এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান।
অপারেটরদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, আপনারাই দেখিয়ে দিয়েছেন যদি আমরা ট্যাক্সেশন পলিসি রিফর্ম এবং ইমপ্রুভ করি তাহলে কীভাবে টেলিকম সেক্টর আমাদের ডিজিটাল ইকোনমি এবং স্মার্ট ইকোনমিকে সহায়তা করবে, ৪১-এর একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বিনির্মাণে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তরের যে সেতুবন্ধন টেলিকম সেক্টর কীভাবে করতে পারে, মোবাইল অপারেটরদের ২৫ বছরের যে বিপ্লব তাতে পরিবর্তন ঘটেছে আমাদের ইকোনমিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে মোবাইলের মনোপলি ভেঙে দিয়ে একটা উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে দিলেন তখন মোবাইল ফোনের বিপ্লব হলো উল্লেখ করে পলক বলেন, আজকে যে চারটি অপারেটর কাজ করছে তা ৯৮’ সালের আগে করার সুযোগ ছিল না। কীভাবে একটা দূরদর্শী, সৎ এবং সাহসী নেতৃত্ব একটা দেশের অর্থনীতিকে, দেশের জনগণকে উপকৃত করতে পারে তার একটা বড় উদাহরণ মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দেওয়া।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে পেলাম মোবাইল গ্রাহক ১৯ কোটি, মোবাইল পেনিট্রেশন ১৬০ শতাংশ। ফোরজি কাভারেজ প্রায় ৯৮ শতাংশ। এগুলো সবগুলো সাফল্যের মাইলফলক। আমরা স্মার্টফোনের পেনিট্রেশনের জায়গায় খুশি, ৬৫ শতাংশ পেনিট্রেশন। এ সেক্টরে দেড় লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এখান থেকে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ট্যাক্স পেয়েছিল। গত বছর গ্রামীণ ফোন ১২ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স দিয়েছে। আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ- আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলো শেখ হাসিনা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। সেখানে রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে টেলিকম সেক্টর। এটা কিন্তু আমরা অস্বীকার করছি না।
পলক বলেন, মানুষ এখন আর সরকারি অফিসে যেতে চায় না, এখন কেউ দোকানে গিয়েও শপিং করতে চায় না, এমনকি বাড়ির কাছে ব্যাংক বা সরকারি দপ্তরে যেতে চায় না। সবকিছু যেন তার হাতের মুঠোয়, একেবারে মোবাইল ফোনের ভেতর। মোবাইল ফোনই এখন সবকিছুর সোর্স। সংবাদ, বিনোদন, অফিস সবকিছুই।
টেলিকম প্রতিমন্ত্রী অপারেটরদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের দেড় লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং দেড় লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয় এবং দশ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানে অত্যন্ত খুশি। তবে আপনারাও নিশ্চয়ই আমার মতো সন্তুষ্ট নন। নিশ্চয়ই আপনারাও চান এ সেক্টরে আরও গ্রোথ, আরও গ্রোথ। আমরাও চাই আরও গ্রোথ। তার জন্য একটা ফাইন ডায়ালাইস দরকার। ডায়ালাইস বিটুইন রেগুলোশনস অ্যান্ড ইনোভেশনস। আমি একথা সব সময়ই বলি বিটিআরসি যেন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা থেকে উদ্ভাবনী সংস্থায় আবির্ভূত হয়। একইভাবে এখন আমাদের সময়ের দাবি যে, এনবিআরকেও রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি আরও নতুন নতুন রাজস্বের উৎস তৈরি করা একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। এনবিআরকে একটা স্মার্ট প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
সেমিনারে টেলিকম খাতের ট্যাক্সেশন নিয়ে এ খাতের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন এমটব মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শাহজাহান মাহমুদ, এফআইসিসিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির, গ্রামীণ ফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, রবি’র চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংকের অ্যাকটিং সিইও তৈমুর রহমান, টেলিকম বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদী ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিনসহ মোবাইল অপারেটরের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৪
এমআইএইচ/আরআইএস