ঢাকা: ১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে বাবাকে হারান ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার সোনাকান্দি গ্রামের হাবিবুর রহমান। বাবাকে হারানোর পর জীবন-জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে আসেন তিনি।
জীবনের এই পর্যায়ে এসে থমকে গেছে পেশাদার রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের জীবন। রুটি-রুজির জন্য এই বয়সেও তাকে রিকশা টানতে হয়। কঠোর পরিশ্রমের কাজটি ছাড়া তার সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।
কন্যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় তারাও বাবা-মাকে সহায়তা করতে পারেন না।
বেশ কয়েকবার স্ট্রোক করার কারণে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো না। কিন্তু চরম দারিদ্র্যের কারণে তিনি বাধ্য হয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। চলমান তাপদাহের মধ্যে তিনি ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। হাবিবুর রহমান এবং তার স্ত্রী সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকেও কোনো সুবিধা পাননি।
এই ছিল খুব সাধারণ জীবনযাপন করা হাবিবুর রহমানের জীবন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক সাংবাদিকের একটি পোস্ট হাবিবুর রহমানের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। তিনি এখন জমির সঙ্গে একটি বাড়ি পেতে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তাকে ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশাও দেওয়া হবে।
রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের দুর্দশার নিয়ে সাংবাদিক জ.ই মামুনের ফেসবুক পোস্টটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নজরে আসে। তিনি রিকশাচালক হাবিবুর রহমানকে তার এলাকায় একটি ঘর করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানকে নির্দেশ দেন।
শুক্রবার সোনাকান্দি গ্রামে হাবিবুর রহমানের বাড়িতে যান গৌরীপুরের ইউএনও শাকিল আহমেদ। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন হাবিবুর রহমানের নিজের জমি আছে মোটে আধা শতাংশ। এতটুকু জায়গায় ঘর করা সম্ভব না। হাবিবুর রহমানের জন্য ঘর করতে সরকারি খাস জমি খোঁজার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত খাস জমি খোঁজার ঝামেলায় আর যেতে হয়নি। হাবিবুর রহমানের জমির লাগোয়া ওই ইউনিয়েনের সাবেক চেয়ারম্যান দুলাল সাহেবের জমি আছে। তিনি সেখান থেকে দুই শতাংশ জমি হাবিব মিয়াকে দান করার ঘোষণা দেন এবং সেই জায়গাতেই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে হাবিবুর রহমানকে।
হাবিবুর রহমান জানান, তিনি আগে রাস্তায় ঘুমাতেন। ঢাকায় তার থাকার জায়গা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তাকে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে।
তিনি জানান, গত দুই দিনে তাকে অনেক বড় বড় মানুষ ফোন করেছেন, অনেক কিছু বলেছেন, জানতে চেয়েছেন। জমির দলিল, বাড়ি নির্মাণ, বয়স্ক ভাতা আর অন্যান্য কাজের জন্য তাকে বাড়ি যেতে বলা হয়েছে। তিনি এখন গ্রামের বাড়িতে আছেন।
হাবিবুর রহমান আরও জানান, তিনি ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশার জন্য অনুরোধ করেছেন। তারা (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) তাকে একটি অটোরিকশা রিকশা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
৫ নং সহনাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুবেল বলেন, হাবিবুর রহমান এলাকায় ফেরার পরই তার এবং তার স্ত্রীর নাম বয়স্ক ভাতা গ্রহীতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
এমইউএম/এমজেএফ