ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অনিয়মের প্রতিবাদ করায় কপাল পুড়ল এইচএসসি পরীক্ষার্থীর!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৪
অনিয়মের প্রতিবাদ করায় কপাল পুড়ল এইচএসসি পরীক্ষার্থীর! সালথা সরকারি কলেজ

ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সালথা সরকারি কলেজ। এ সরকারি কলেজটি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৮ সালে সরকারিকরণ করা হয়।

কলেজটির অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন প্রফেসর কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন। এই কলেজটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা সময় অনিয়মের অভিযোগ উঠলে স্থানীয় সাংবাদিকরা তা তুলে ধরেন।  

আর এরকম একটি অনিয়মের সংবাদ স্থানীয় এক সাংবাদিক ফেসবুক শেয়ার করেন। আর সেই সংবাদে অধ্যক্ষের অনিয়মের প্রতিবাদ করে ফেসবুকে কমেন্ট করে কপাল পুড়েছে হুসাইন মাতুব্বর নামে এইচএসসির এক পরীক্ষার্থীর। ওই পরীক্ষার্থী কলেজটির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী এবং উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের বাতা গ্রামের মৃত জাফর মাতুব্বরের ছেলে বলে জানা গেছে।  

ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, গত বছর অধ্যক্ষ কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মনের অনিয়ম নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করেন। যা ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর ‘সালথায় দুই কলেজে ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে অর্থ আদায় ও খাতা বাণিজ্যের অভিযোগ’ শিরোনামে বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাতে অধ্যক্ষ কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়। সংবাদটি স্থানীয় নুরুল ইসলাম নাহিদ নামে এক সাংবাদিক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন। তাতে শিক্ষার্থী হুসাইন কমেন্ট করে এবং অনিয়মের বিষয়ে আরও তথ্য তুলে ধরে। তার কমেন্টের অংশ স্ক্রিন শর্ট দিয়ে রাখেন অধ্যক্ষ কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন। পরদিন ওই শিক্ষার্থী কলেজে গেলে তার মোবাইলফোন জব্দ করেন অধ্যক্ষ এবং এ ধরনের কমেন্ট কেন করেছে বলে শাসাতে থাকেন। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা কলেজে গেলে তাদের সঙ্গেও কথা কাটাকাটিতে জড়ান অধ্যক্ষ। এর কয়েকদিন পর মোবাইলফোনটি ফেরত দেন অধ্যক্ষ।

এরই জের ধরে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা থেকে শিক্ষার্থী হুসাইন মাতুব্বরকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আর এ অভিযোগ হুসাইনের।
হুসাইন মাতুব্বর অভিযোগ করে বলেন, ‘অধ্যক্ষ স্যারের অনিয়মের সংবাদে আমি না বুঝেই ফেসবুকে কমেন্ট করেছিলাম। সেই কমেন্টই আমার গলার কাঁটা হয়ে গেল। আমাকে এইচএসসি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বার বার অধ্যক্ষ স্যারের কাছে আকুতি-মিনতি করলেও কোনো কথায়ই শুনছেন না তিনি। ’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষার টেস্ট (মূল্যায়ন) পরীক্ষায় আমি ভালো লিখেছি। কিন্তু আমাকে একাধিক বিষয়ে ফেল দেখানো হয়েছে। পরে অধ্যক্ষ স্যারের কাছে গেলে আমাকে আবেদন করে পুনরায় পরীক্ষা দিতে বলেন। আমি স্যারের কথামতো আবেদন নিয়ে গেলে তা গ্রহণ করেন না। পরে আবার আবেদন দিতে বলেন। পুনরায় আবেদন করলে অধ্যক্ষ স্যার বলেন আবেদনে মারজিন (দাগ) টানা হয়নি। এরপর থেকে তার কাছে আর যেতে দেন না অধ্যক্ষ। ’

হুসাইন বলেন, ‘পরীক্ষার্থীর তালিকা থেকে অনেককেই বাদ দেওয়া হয়েছিল, পরে তাদের অনেককেই অধ্যক্ষ স্যার নিয়েছেন। তাহলে আমার অপরাধ কী, একটা কমেন্ট করেই মহা অপরাধ করে ফেলেছি? আমি প্রশাসনের মাধ্যমে সমাধান করে পরীক্ষায় অংশ নিতে চাই। ’

ওই শিক্ষার্থীর বড় ভাই শ্রাবণ হাসান বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রথমদিকে আমি অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, আমরা সার্বিক দিক বিবেচনা করে বাদ দিয়েছি। এরপর কয়েকদিন আগে অধ্যক্ষ জানান, হুসাইন একাধিক বিষয়ে ফেল করেছে, নেওয়া যাবে না। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের কোন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে -এটা বোধগম্য হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন বলেন, হুসাইনের সঙ্গে অতীতে কী হয়েছিল তা আমার মনে নেই। এমন কোনো ঘটনার কারণে তাকে পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে না দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।  

তিনি বলেন, ওই ছাত্রের বিগত রেজাল্ট ভালো না। সে প্রথম বর্ষে, প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় এবং নির্বাচনী পরীক্ষায় খারাপ করেছে। এছাড়া আমরা অভিভাবকদের নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও (ইউএনও) ছিলেন। সবাই একমত হন যে, যারা রেজাল্ট খারাপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কলেজ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিই সঠিক।  

তিনি জানান, এবার এই কলেজ থেকে ২৪৩ জন নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১২২ জনের মতো টিকছে।

বিষয়টি নিয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আনিচুর রহমান বালী বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষকে ফোন দিয়েছিলাম। অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, ওই ছেলে পাঁচ-ছয়টি বিষয়ে ফেল করেছে। এখন যদি ওই ছেলে মনে করে, তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে, তাহলে সে কলেজে পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করতে পারে। আর যদি সে বিষয়ে অধ্যক্ষ ব্যবস্থা না নিয়ে থাকলে ওই ছাত্র উপজেলা প্রশাসন বা জেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে, ফরিদপুরের জেলা শিক্ষা অফিসার বিষ্ণু পদ ঘোষাল ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।