ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা এখন পাগল প্রায়!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৪
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা এখন পাগল প্রায়!

ফরিদপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার হামেরদী ইউনিয়নের খাপুরা গ্রামের জুয়েল শিকদার ১৫ বছর আগে পরিবার নিয়ে ঢাকার রামপুরা এলাকায় বসবাস করেন। তিনি পেশায় একজন রিকশা চালক।

অভাব অনটনের মধ্যে রিকশা চালিয়ে তিনি সংসার চালাতেন। নিজের বলতে জায়গা জমি ঘর দরজা কিছুই ছিল না। গ্রামের বাড়ি খাপুরা মাঝে মধ্যে এসে অন্যের ঘরে থাকতেন। রিকশা চালক জুয়েল শিকদারের একমাত্র ছেলে তামিম শিকদার (১০) ঢাকার রামপুরা প্রাইমারি স্কুলের ৩য় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রামপুরায় ছাত্র ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় তামিম শিকদার (১০)।  

এ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র ও পুলিশের গোলাগুলিতে ভাঙ্গার দুই শিশু এক কলেজছাত্রসহ মোট ৩ জন নিহত হয়েছে।  

গুলিতে নিহত তামিমের বাবা জুয়েল শিকদার বলেন, আমাদের বাসার আশপাশের মহল্লার ছোট ছোট পোলাপানেরা/ শিশুরা বিকেল বেলা রাস্তার পাশে প্রতিদিন মাঠে খেলতে যায়। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে ৩টার সময় তামিম সহপাঠীদের নিয়ে রামপুরা এলাকায় বল খেলতে যায়। তার পাশে রাস্তার ওপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্ররা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছিল। সব শিশুরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তারা সংঘর্ষ দেখতে ছিল। হঠাৎ তামিম চিৎকার দিয়ে পড়ে যায়। সবাই দেখে তামিমের বুক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তারা আমাদের বাসায় এসে খবর দেয়। আমরা দৌঁড়ে গিয়ে দেখি তামিমের বুকে একটি গুলি লেগেছে। তামিমকে রিকশা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। তামিমকে ভাড়া বাসার সামনে নিয়ে আসি এবং ওই দিন রাত ১২টার দিকে রামপুরা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে সবাই এখন পাগল হয়ে গেছে।  

নিহত তামিমের চাচা খাপুরা গ্রামের মিরাজ শিকদার বলেন, আমার বড় ভাই জুয়েল শিকদার অনেক গরিব। ১৫ বছর আগে বাড়ি থেকে ঢাকা রামপুর এলাকায় গিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সেখানে মা, বোন, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান তামিমকে নিয়ে রামপুরা এলাকায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতো। বছরে ২/১ বার ভাঙ্গার খাপুরা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসতো। শুক্রবার বিকেলে সংবাদ পাই, আমার ভাতিজা তামিমের বুকে গুলি লেগেছে। পরে আমার ভাই ও ভাবিসহ সবাই তামিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তাররা তামিমকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।  

মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ও দেশের পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমরা কেউ ঢাকায় যেতে পারিনি। আমার ভাতিজা তামিমকে হারিয়ে তার দাদি, ফুপু বাবা-মা সহ সবাই এখন পাগলের মতো হয়ে গেছে। শুনতে পারলাম সরকার থেকে তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি। লাশ গ্রামের বাড়িতে আনার মতো তাদের কোনো সামর্থ্য ছিল না। আমরা ভাঙ্গা থেকে টাকা পাঠাবো তারও কোনো ব্যবস্থাও ছিল না। পরে ওইদিন রাত ১২ টার দিকে রামপুরা কবর স্থানে তামিমকে দাফন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।