ঢাকা: লালফিতার দৌরাত্ম্য একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক দেশ গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন বলেন, পৃথিবীর সব কর্মকাণ্ডের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। বিন্দু পরিমাণ ভালো কাজ করলে তার সুফল যেমন পাওয়া যাবে তেমনি বিন্দু পরিমাণ খারাপ কাজ করলেও তার প্রতিফল ভোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, এই পৃথিবীতে দুদক, গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে বাঁচতে পারলেও পরকালে নিষ্কৃতি পাবার উপায় নেই। এদেশে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করেছে। টেবিলে টেবিলে ঘুষ না দিলে ফাইল নড়ে না। লালফিতার দৌরাত্ম্য একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক দেশ গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতার একটু স্বাদ পেলেই লুটপাট করা, বিদেশে অর্থ পাচার করা ও বিদেশে বাড়ি করার মতো মানসিকতা আমাদের পেয়ে বসেছে। এ সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই।
ধর্মকে ব্যবহার করে দুর্নীতি করাকে প্রহসন হিসেবে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমরা লম্বা দাড়ি রাখি, আবার ঘুষ খাই এবং ঘুষের টাকায় হজ-উমরাহ পালন করে থাকি। এ সংস্কৃতি আমাদের পরিহার করতে হবে।
হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ পথে উপার্জনের টাকায় হজ-উমরাহ পালন করা হলে সেটা আল্লাহ কবুল করবেন না। এমনকি অবৈধ আয়ে গঠিত শরীরও বেহেশতে প্রবেশ করবে না। তিনি সবাইকে হালাল পথে উপার্জনের অনুরোধ জানান।
ড. খালিদ বলেন, মহানবী (সা.) দুনিয়াতে এসে একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার আগমনের পূর্বে মানুষের অধিকার বলতে কিছু ছিল না। মহানবী (সা.) প্রথম ঘোষণা করেন, আরবের ওপর অনারবের কিংবা অনারবের ওপর আরবের, সাদার ওপর কালোর কিংবা কালোর ওপর সাদার বিশেষ কোন মর্যাদা নেই, পৃথিবীর সব মানুষ সমান।
তিনি বলেন, আমরা যে রাষ্ট্রীয় কাজ করছি এটাও ইবাদত। ঘুষ নিলে ও দুর্নীতি করলে সেই ইবাদত থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তিনি মহানবীর (সা.) আদর্শকে লালন করার পাশাপাশি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান।
হাদিস থেকে উদ্ধৃত করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, মুসলিম রাষ্ট্রে যদি কোনো মুসলমান কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর অত্যাচার কিংবা জুলুম করে তবে কিয়ামতের দিন মহানবী (সা.) সেই মুসলিমের বিপক্ষে দাঁড়াবেন। এজন্য আমরা যদি সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি দেশ গড়তে চাই তাহলে নবী (সা.) এর আদর্শ মেনে চলা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নয়েব আলী মণ্ডল, হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদারসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
শেষে মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
আরকেআর/আরআইএস