ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আতঙ্কে লেবানন প্রবাসীরা, ফিরতে চান দেশে

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৪
আতঙ্কে লেবানন প্রবাসীরা, ফিরতে চান দেশে সংগৃহীত ছবি

ঢাকা: যুদ্ধের মধ্যে আতঙ্কে দিন কাটছে লেবাননে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের। বেশির ভাগ প্রবাসী বাংলাদেশি বৈরুত ছেড়ে নিরাপদে বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নিয়েছেন।

তবে তারা বেশির ভাগই দেশে ফিরতে আগ্রহী।

লেবাননে গত তিন সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তবে এই হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাধারণ মানুষও। লেবাননের বৈরুতে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেকারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈরুত ছেড়ে আশপাশের শহরে আশ্রয় নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) লেবানন প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানিয়েছেন, এখানকার প্রবাসীরা দ্রুত দেশে ফিরতে আগ্রহী। সরকার দ্রুত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করলে অনেকেই দেশে ফিরবেন। তবে যাদের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই, তারা ফিরতে আগ্রহী নন।

বৈরুত প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক মোল্লা সেলিম জানিয়েছেন, বৈরুতে হামলার পর অনেক বাংলাদেশি বাইব্লোস শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে তারা অনেকটাই নিরাপদ। তবে যুদ্ধের ফলে খাবারের দাম অনেক বেড়েছে। সে কারণে তাদের কষ্ট হচ্ছে।

তিনি জানান, লেবাননে প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গোল্ডেন স্টার ফাউন্ডেশন সহায়তা দিচ্ছে। এই সংগঠন প্রবাসীদের নিরাপদে আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করছে। তবে তারা দ্রুত বাংলাদেশে ফিরতে চান।

লেবানন প্রবাসী শেখ মামুন জানিয়েছেন, লেবাননে হামলার পর থেকেই অনেক দেশই বিশেষ ফ্লাইটে নিজ দেশের প্রবাসীদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। চীন, জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই নাগরিকদের নিয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। আবার অনেক এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে আসার জন্য দেড় হাজার থেকে ১৮০০ ডলার বিমান ভাড়া চাইছে। এত টাকা দিয়ে প্রবাসীদের ফেরার সামার্থ্য নেই। এ কারণে সরকারকে  জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সূত্র জানায়, লেবাননে বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। এসব বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই ভালো ছিলেন। তবে ইসরায়েলের হামলার পর তারা বিপদে পড়েছেন। বিশেষ করে বৈরুতে থাকা বাংলাদেশিরা কর্মস্থল ছেড়ে অন্য শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অবৈধ প্রবাসীরা কোনোভাবেই ফিরতে আগ্রহী নন। কারণ তারা ফিরলে আর সহজে যেতে পারবেন না।

এদিকে সরকার থেকে প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলছে। লেবানন থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসীদের ১১ অক্টোবর রাত ১২টার মধ্যে বৈরুত দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। ফিরতে আগ্রহীদের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মাধ্যমে ফিরিয়ে আনবে সরকার।

বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, লেবাননে যুদ্ধের কারণে যেসব প্রবাসী কর্মস্থল ও আবাসস্থল ত্যাগ করেছেন তাদের লেবানন প্রবাসী বিভিন্ন বাংলাদেশি ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে তুলনামূলক নিরাপদ এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি লেবানিজ সরকার ঘোষিত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক বিভিন্ন সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্র ও আবাসস্থলে অবস্থানকারী প্রবাসীদের কাছে খাদ্যসামগ্রীসহ অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র পৌঁছানো হয়েছে। এ সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, লেবানন থেকে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারা যেন ওয়ার জোন থেকে আর একটু উত্তরে সরে যান। আমরা আইওএম’কে বলেছি, একটা ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে। তারা সেটা করবে। তবে সমস্যা হলো, বৈরুত এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাই করা রিস্কি। সে কারণে বিকল্প পথে ফ্লাই করা যায় কি না, সে চেষ্টাও করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৪
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।