বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রামে তার ভক্ত ও অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের একজন আইনজীবী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মিথ্যা ও ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে।
মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন বাতিল করে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রিজন ভ্যান আটকে দেন তার অনুসারীরা। আড়াই ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে চিন্ময় অনুসারীদের সরিয়ে দিয়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যায়।
ভারতের রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড, অপ ইন্ডিয়াসহ একাধিক গণমাধ্যমে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত এই দাবিটি মিথ্যা এবং খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) প্রেস উইং ফ্যাক্টস।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করছে, আজ চট্টগ্রামে নির্মমভাবে খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। দাবিটি মিথ্যা এবং খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জমা দেওয়া ওকালতনামায় দেখা যাচ্ছে, অ্যাডভোকেট সুভাশিস শর্মা তার আইনজীবী। আমরা সকলকে যেকোনো প্রকার উসকানিমূলক ও মিথ্যা প্রতিবেদন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। ’
মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার পথে লালদীঘি এলাকায় চিন্ময়ের ভক্তরা বিক্ষোভ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়ায় চিন্ময় কৃষ্ণের ভক্ত ও সমর্থকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত প্রাঙ্গণে একটি মসজিদ কমপ্লেক্সে ইটপাটকেল ছোড়ে এবং নিচতলার একটি কক্ষের কাচ ভাঙচুর করে। এ সময় তারা ছয়টি গাড়ি ও ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
ভক্তরা এলোপাতাড়ি পাথর ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে রঙ্গম সিনেমা হল এলাকায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ইসকন সমর্থকরা সাইফুলকে রঙ্গম সিনেমা হল এলাকায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, আমরা আদালতে জামিন আবেদন করেছিলাম। আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করেন।
বাংলাদেশি একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ‘নিহত সাইফুল ইসলাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ’
একই তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যমগুলোও। সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর সমর্থকদের হামলায় চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘অ্যাডভোকেট মোক্তার উদ্দিন সাগর নামে এক আইনজীবী জানান, আমার চোখের সামনে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কোপানো হয়েছে। ’
এসব প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, চট্টগ্রামে মঙ্গলবারের সংঘর্ষে নিহত সাইফুল ইসলাম আলিফ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নয় বরং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এবং তিনি পুলিশের গুলিতে মারা যাননি। তাকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী ছিলেন স্বরূপ কান্তি নাথ।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
এমজেএফ