ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আগুনে পুড়ল সাহিদার মেয়ের বিয়ের স্বপ্ন

ঊর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫
আগুনে পুড়ল সাহিদার মেয়ের বিয়ের স্বপ্ন

ঢাকা: দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। পুড়ছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার পুলপাড় বস্তির প্রায় ৫০০ ঘর।

প্রত্যেকটি ঘর একেকটি পরিবার, আর প্রত্যেকটি পরিবারে হাজার-লাখো স্বপ্ন। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সেসব ঘর পোড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বপ্ন পোড়া দেখছিলেন সাহিদা বেগম।

তার মেয়ের বিয়ে সামনে। কানের আর হাতের গহনা দেওয়ার শর্তে বিয়ে ঠিক হয়েছে। হবু বর জিলানের পরিবার থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গয়না না দিলে বিয়ে না।

স্বামী মোহাম্মদ আলী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আর সাহিদা করেন বাসা বাড়িতে বুয়ার কাজ। এই করেই খেয়ে না খেয়ে সংসার চলতো সাহিদার।

দেখতে দেখতে মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে যায়। অর্থের অভাবে মেয়েকে লেখাপড়াও শেখাতে পারেননি সাহিদা। সাহিদা আর মোহাম্মদ আলী তিল তিল করে ২৫ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন মেয়ের বিয়ের গহনা কিনবেন বলে। আর সেই টাকা ছিল পুলপাড় বস্তির ঘরে।

রোববার (১১ জানুয়ারি) অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে সাহিদা আর মোহাম্মদ আলীর ২৫ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে পুড়ে গেছে তাদের সব স্বপ্নও।

মেয়ের বিয়ে বুঝি আর হলো না-বলেই হুঁ হুঁ করে কেদে ওঠেন সাহিদা।

সাহিদার মতো আরও প্রায় ৫০০ পরিবারের স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে সর্বনাশা আগুনে।

রোববার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় বাংলানিউজ।

আগুন নিয়ন্ত্রণে মোহাম্মদপুর, পলাশী, লালবাগ ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ মিলিয়ে ফায়‍ার সার্ভিসের মোট ১০ ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায় বলে সকাল ৯টার দিকে বাংলানিউজকে জানান ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষের জয়েন্ট ডিউটি অফিসার নাজমা আক্তার।

পৌনে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী জসিম বাংলানিউজকে জানান, আগুন এখন পুরোপুরি ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণে। তবে ক্ষয়ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।

আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি ঘরের গৃহকর্ত্রী মনোয়ারা বাংলানিউজকে বলেন, আগুনে আমার ঘরসহ অন্তত ৪০টি দোকান ও ৫০টি বাড়ি পুড়ে গেছে।

তারও আগে ঘটনাস্থলে স্থানীয় এক বাসিন্দা দাবি করেন, অগ্নিকাণ্ডের পর উদ্ধারকালে তিন বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফাতেমা নামে ওই শিশুকে বাসায় ঘুমন্ত রেখে তার বড়বোনকে নিয়ে মা আসমা স্কুলে গেলে অগ্নিকাণ্ডে ওই শিশুর মৃত্যু হয়।

মনোয়ারা জানান, তিন তলা একটি টং ঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঘটনাস্থল থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বস্তির পূর্ব পার্শ্বের ঘরগুলো বেশি আগুনে পুড়েছে। এছাড়া, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পশ্চিম পার্শ্বের ঘরগুলোও।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরু পথ হওয়ায় বস্তিতে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে ফায়ার সার্ভিসকে বেশ বেগ পেতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।