ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকার বাঁশিওয়ালা...

গোলাম রসূল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫
ঢাকার বাঁশিওয়ালা... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মাথায় সাদা ও মেহেদী রাঙা চুল। দীর্ঘ কপাল।

বাম হাতে রুপালি রঙের ঘড়িটি চিকচিক করছে। দীর্ঘ ও সুঠাম দেহের অধিকারী লোকটি যতেষ্ট পরিমাণ আয়েশী ভঙ্গিতে বসে প্রফুল্ল চিত্তে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছে। না, সে হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা নয়। যার বাঁশির সুরের টানে সমস্ত শিশু শহর ছেড়ে দূর পাহাড়ে চলে গিয়েছিল। তিনি আমাদের ঢাকার বাঁশিওয়ালা, আমাদের লাবু ভাই।

লাবু ভাইয়ের সুমধুর বাঁশির সুর রাস্তা দিয়ে চলাচলরত সব মানুষকে আকৃষ্ট করছে প্রবলভাবে। যদি মানুষের কাজের তাড়া না থাকত তবে লাবু ভাইয়ের বাঁশির সুরে মাতোয়ারা হওয়ার জন্য সবাই রাস্তায় লাইন ধরে বসে যেত। এরপরও লাবু ভাইয়ের বাঁশির দোকানে যে ভিড় লক্ষ্য করা গেল তার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।

ঢাকার বাঁশিওয়ালার পুরো নাম মোহাম্মদ লাবু মিয়া। বয়স একষট্টি। পিতৃনিবাস টাঙ্গাইলে। তবে লাবু মিয়া জন্মেছেন রাজধানীর এ্যালিফেন্ট রোডে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলে। তার বাবা মোহাম্মদ ফেবু মিয়া ব্রিটিশ সরকারের সৈনিক ছিলেন। অবসরে বাঁশি বাজাতেন এবং বাঁশি তৈরি করতেন তিনি। লাবু মিয়ার বাঁশির হাতেখড়ি তার বাবার কাছেই। তারপর ওস্তাদ সিকিম আলী, পাকিস্তানের সালামত হোসেন খাঁন এবং ভারতের রুনু মজুমদারসহ অনেকের কাছ থেকেই বাঁশির তালিম নিয়েছেন।

লাবু ভাইয়ের বাঁশির দোকান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার গেটের পাশে হাঁটার জায়গাটিতে দেয়াল ঘেষে। চারুকলার শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়াল চিত্র আর লাবু লাইয়ের বাঁশি ও সঙ্গীতের অন্যান্য সরঞ্জাম মিলে অসাধারণ এক ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে।

নিজের হাতে তৈরি বাঁশি ও সঙ্গীতের অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রি করাই লাবু মিয়ার প্রধান ব্যবসা। বিক্রির কৌশল হিসেবে তিনি বিভিন্ন সুরে বাঁশি বাজান। আর সে সুর শুনে লোকে থমকে দাড়ায় এবং বাঁশি কেনেন। কেনেন একতারা, ঢোল ও সঙ্গীতের অন্যান্য সরঞ্জাম।

আধুনিক সঙ্গীত সরঞ্জামের ভিড়ে বিলুপ্তপ্রায় বাঁশি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ঢাকার বাঁশিওয়ালা গ্রহণ করেছেন এক মহান উদ্যোগ। বিনামূল্যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বাঁশি শেখাচ্ছেন। প্রতিদিন এক-দুই জন শিক্ষার্থী বাঁশি বাজানো শেখছে তার কাছ থেকে।

বাঁশি বাজানো ও বিক্রির পাশাপাশি ছাত্রদের বাসায় গিয়ে বাঁশির টিউশনিও করেন লাবু মিয়া। নিজের বাসায় ব্যাচ করে ছাত্রদের বাঁশি শেখাচ্ছেন। আবার সঙ্গীতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত হয়েও স্টেজ মাতান তিনি। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে তার ডাক পড়েই।

লাবু মিয়া জানালেন, তার বানানো বাঁশির কদর দেশজুড়ে। আর তাইতো সারাদেশের সব সঙ্গীত স্টোরে তার বাঁশি পাওয়া যায়। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে বাঁশি রপ্তানিকারকগণ তার বাঁশি নিয়ে থাকেন।

স্ত্রী ও চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটছে লাবু মিয়ার। মেঝো ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্টে পড়ছে। আর একজন অনার্স পড়ছে শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজে । পরিবার, ব্যবসা, শিক্ষকতা আর বাঁশি সবমিলিয়ে বেশ ভালই আছেন লাবু ভাই। ভালোই থাকুক ঢাকার বাঁশিওয়ালা।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।