ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আগুনে পুড়ছে গাড়ি, মাসুল মালিকের

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫
আগুনে পুড়ছে গাড়ি, মাসুল মালিকের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: অবরোধ উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা লোকাল বাসগুলোতে আগুন দিচ্ছে অবরোধ সমথর্নকারীরা। এতে করে প্রতিদিনই পুড়ে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা দামের লোকাল বাস।

আর মাসুল দিতে হচ্ছে মালিকদেরই।

কোনও কোনও গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ফায়ার ব্রিগেড ছুটে এসে কোনও কোনও গাড়ি অর্ধ পোড়া, সিকি পোড়া অবস্থায় আগুন নেভাচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেগুলোও হয়ে যাচ্ছে ব্যবহার অনুপযোগী।  

গ্যারেজে সেগুলো মেরামতের জন্য অর্থ খরচ করেও সম্পূর্ণ ফিট করা সম্ভব হচ্ছে না। অবরোধে সাড়া না দিয়ে সরকারের কথায় গাড়ি বের করে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে মালিকপক্ষকে।

এ নিয়ে মালিকদের মধ্যে ক্ষোভেরও জন্ম নিচ্ছে। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন থানা, গ্যারেজ ঘুরে আর মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জেনেছে বাংলানিউজ।

সোমবার রাজধানীর একদিকের যাত্রাবাড়ি, কাজলা অন্যদিকের গাবতলী ও মাজার রোডের কয়েকটি গ্যারেজ ঘুরে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া গাড়ি গু্লোতে চলছে মেরামতের কাজ।

যাত্রাবাড়ির মির্দাবাড়ি এলাকার রাসেল অটোমোবাইলসে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ছয় নম্বর একটি বাসের অবশিষ্ট বলতে রয়েছে শুধু গাড়ির ইঞ্জিন আর স্টিল বডিটাই। ভেতরের সিট থেকে শুরু করে জানালার কাচ সবই গলে গেছে।

বাসটি সম্পুর্ন মেরামত করতে কেমন খরচ হবে জানতে চাইলে গ্যারেজ মালিক মো. রাসেল (২৯) জানান, শুধু গ্যারেজ খরচেই প্রায় চার লাখ টাকা। এছাড়াও লেবার খরচ আর মালামাল খরচ তো আছেই।

মেরামত করে রাস্তায় ছাড়তে সময় লাগবে ৮ থেকে ৯ দিন সময় লাগবে, তারও ক্ষতি রয়েছে মালিক পক্ষের।

বাস মালিক  মিঠু জানান, গাড়ি মেরামত করার পরও যে নিরাপদভাবে রাস্তায় চলতে পারবে সেই গ্যারান্টিও নেই।

‘এত ক্ষতি আমরা কেমনে পোষামু!’ আকুতি মিঠুর।
 
কাজলার কাজল অটোমোবাইলসে সারাইয়ের কাজ চলছিলো একটি স্টাফ বাসের। স্টাফ বাস হলেও এটি নিজস্ব মালিকানার বাস। গ্যারেজের মালিক কাজল জানান, ৫ জানুয়ারি বাসটিকে পোড়ানো অবস্থায় তার গ্যারেজে আনা হয়। বাসটি পল্লী বিদ্যুতের স্টাফদের নিয়ে যাতায়াত করতো। এটি মেরামত করতে সময় লাগবে প্রায় ১৫ দিন আর টাকা লাগবে প্রায় ২ লাখ।

তবে গাড়ির মালিক শরীফ মিয়া এখন পযর্ন্ত কোন টাকা তাকে (কাজল) দেননি। টাকা না দেওয়া পযর্ন্ত বাসটি মেরামতও করা হবে না বলে জানান তিনি।

বাংলানিউজের কথা হয় বাস মালিক শরীফ মিয়ার সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘সরকার কইছে তাই গাড়ি বাইর করছি। এখন হের কথা শুইন্যা যে ক্ষতিডা হইছে সেই মাসূল তো আমারই গুনতে হইবো। ’

সামাদপুরের আলী অটোমোবাইলস, রানা অটোমোবাইলস সহ আরো কয়েকটি গ্যারেজে বেশ কয়েকটি পোড়ানোবাস যাত্রাবাড়ি এলাকায় মেরামত করা হচ্ছে।

গাবতলীর মাজার রোডের পেছনের সিএমবি গ্যারেজে পড়ে ‍আছে পুড়ে যাওয়া বিহঙ্গ ও তানজিল পরিবহনের দুটি বাস। মেরামত করতে ১০-১২ দিন লাগবে এবং খরচ পরবে প্রায় দেড় লাখ টাকা করে জানালেন গ্যারেজের মালিক নুর হোসেন।

তবে এসব গাড়ির মালিকের কোন খোঁজ এখনও জানেন না গ্যারেজ মালিক।

ঢাকা মেট্টোপলিট্রন (ডিএমপি) মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,  গত ৪ জানুয়ারি রাজধানীতে বিছিন্নভাবে মোট ১৭ টি গাড়িতে আগুন ও ৬ টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। ৫ জানুয়ারি ৭ টিতে অগ্নিসংযোগ ও ২টি গাড়ি ভাংচুর, ৬ জানুয়ারি ১৭ টি গাড়িতে অগ্নি সংযোগ ও ২টি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ৭ জানুয়ারি কোন ভাংচুরের ঘটনা না ঘটলেও মোট ১১ টি গাড়িতে আগুন, ৮ জানুয়ারি মোট ২৩ টি গাড়িতে আগুন, ৯ জানুয়ারি ৭ টি গাড়িতে আগুন ও ১ টি গাড়ি ভাংচুর করেছে অবরোধ সমর্থনকারীরা। এছাড়াও ১০, ১১, ১২ জানুয়ারি বেশ কয়েকটি বাসে আগুন ও ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে।

এসব গাড়ি পোড়ানো ও ভাংচুরের ঘটনায় মামলাও হচ্ছে। পল্টন থানায় গাড়ি পোড়ানো মামলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। থানার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৪ জানুয়ারি দুপুরে বায়তুল মোকাররমের সামনে নিউ ভিশন কোম্পানির একটি গাড়ি (গাড়ি নং ঢাকা মেট্টো-ব-১৪-১৬৫০) ও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় গুলিস্তানে তানজিল পরিহনের একটি গাড়িতে (ঢাকা মেট্টো-জ-১১-৩২০৫) আগুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এছাড়াও ৫ জানুয়ারি শাহজাহানপুর থানার এসআই আবু জাফরের একটি সরকারি মোটর সাইকেলে (ঢাকা মেট্টো-হ-১১-২৭৩৫) এবং দুপুরে পল্টন টাওয়ারের পাশে সার্জেন তনুময় সিকদারের একটি মোটর সাইকেলে (ঢাকা মেট্টো-হ-১৪-৩৬৮৬) আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।

রাজউক ভবনের সামনে ৬ জানুয়ারির দুপুরে বিআরটিসির একটি বাসে (ঢাকা মেট্টো-ব-১১-৫৩৭৩) ওই সাথে একই সময়েই একটি প্রাইভেট কারে (চট্ট মেট্টো-গ-১১-১৯৯০) আগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতেও পৃথক মামলা হয়েছে।

গুলিস্তান মোড়ে রুপালি ব্যাংকের সামনে ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ৬ নং পরিবহনের একটি বাসে এবং বায়তুল মোকাররমের সামনে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি বাসেও (ঢাকা মেট্টো-জ-৪০৫৬) আগুন দেওয়া হয়, এতেও মামলা হযেছে।

৮ জানুয়ারি রাত ৯ টায় শান্তি নগর মোড়ে তরঙ্গ প্লাস পরিবহনের একটি গাড়িতে (ঢাকা মেট্টো-ব-১৪-১৩৪৫) অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে বলেই জানায় থানা সূত্র।

পল্টন থানার  উপ-পরিদর্শক মো. শহিদুল্লাহ জানান, আংশিক ও অধিক পুড়ে য‍াওয়া গাড়িগুলোর প্রায় সবগুলোই মালিকানা যাচাই করে মালিকদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে শুধু জন প্রশাসনের একটি গাড়ি এখনো থানায় রয়ে গেছে যা কতৃপক্ষের নিয়ে যাওয়ার কথা আছে।

রমনা থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সবকটি ক্ষতিগ্রস্থ গাড়িই ঘটনার দিনই মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।   তবে শাহবাগ থানাধীন এলাকায় কোন গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়নি বলে জানিয়েছেন থানার এলসি মোয়জ্জেম হোসেন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অবরোধে মহাসড়কে কোন গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হলে সংশ্লিষ্ট মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানালেও রাজধানীর লোকাল বাসগুলো ব্যাপারে এখনো কোন ঘোষনা দেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।

গাড়ির পোড়ানোর সংখ্যা কমানোর নতুন কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেন,  গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে প্রণয়ন করা হয়। এজন্য কোন কর্মসূচী ঘোষণার পর থেকেই আমরা অভিযান অব্যাহত রাখি।

তিনি আরো বলেন, তারপরও এসব ঘটনা কমিয়ে মানুষের যান-মালের নিরাপত্তা দিতে যেকোন সময় যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিএমপি প্রস্তুত।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।