ঢাকা: অবরোধের মধ্যেও আটকে থাকছে না দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মাসেতুর কাজ। সড়কপথের পরিবর্তে নৌপথে মালামাল এসে ভিড়ছে মাওয়া ঘাটে।
পহেলা মার্চে টেস্টপাইল বসানোর কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে শুক্রবার দিনভর প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে সরেজমিন পরিদর্শন করে এসেছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল।
এই দলের প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, সদস্য অধ্যাপক আইনুন নিশাতসহ ছয় বিশেষজ্ঞই ঘুরে আসেন সেতু এলাকা।
পরিদর্শন শেষে কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞ প্যানেল।
অবরোধ আর হরতালে কেমন চলছে পদ্মাসেতুর কাজ-এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টানা অবরোধ বা হরতালের কোনো চিত্র নেই পদ্মাপাড়ে। সেখানে অন্যান্য দিনের মতই চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
পদ্মা তীরের মাওয়া অংশের ওয়ার্কশপে ব্যস্ততা দেখে মনে হলো, দিন দিন আরও বিস্তৃত হচ্ছে কাজের পরিসর। চারপাশের দেয়াল তুলে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা দিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। দিন কয়েক আগে যা ছিলো খোলা প্রান্তর, এখন কেবল একটি গেট দিয়ে বিশাল আয়তনের এই ওয়ার্কশপে ঢোকা যায়।
দরজাপথ দিয়ে ঢোকা মাত্রই চোখে পড়ে সিমেন্ট কংক্রিট মিশেল চলছে। বুলডোজার আর এক্সক্যাভেটরের বিকট শব্দ, আর এখানে সেখানে হাজারো শ্রমিক শত রকমের কাজ। মালামালের জাহাজ নোঙ্গর করে আছে পদ্মার তীরে। দৈত্যাকার ক্রেনে নামানো হচ্ছে মালামাল। জমা হচ্ছে ওয়ার্কশপে।
মাস তিনেক আগে পদ্মার দু পাড়ের প্রাথমিক কর্মযজ্ঞই জানান দিচ্ছিলো স্বপ্নের খোলস ছেড়ে বাস্তবতার পথে পদ্মাসেতু। বোঝা গেলো তারই ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলছে সেতুর কাজ।
প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের ওয়ার্কশপ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ার্কশপের কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের থাকার ঘর তৈরি শেষ। এর মধ্যে ৩ থেকে ৪ টি ঘরে থাকা-খাওয়া শুরু হয়েছে। বাকিগুলোয় চলছে ধোয়া মোছার কাজ।
শিগগিরই চীন থেকে আরও প্রকৌশলী-কর্মীদল কাজে যোদ দেবেন এমনটাই জানা গেলো সেখানে।
পদ্মাসেতুর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, অবরোধের মধ্যে সড়কপথে পদ্মাসেতুর মূল্যবান যন্ত্রপাতি নিয়ে আসার ঝুঁকি মোকাবেলা না করে নৌপথ ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে একটু দেরী হলেও পদ্মায় নিরাপদে নিয়ে আসা যাচ্ছে মূল সেতু তৈরির সরঞ্জাম।
পদ্মা সেতুর একজন নির্বাহী প্রকৌশলী শুক্রবার বাংলানিউজকে জানান, কয়েকটি জাহাজে করে ইতোমধ্যে মাওয়ায় এসে গেছে চীন থেকে আসা টেস্ট পাইলগুলো।
সিঙ্গাপুর থেকে চট্রগ্রাম নদীবন্দরে এসে গেছে ট্রায়াল পাইলের হ্যামারগুলো। এগুলোও জাহাজে করে মাওয়ায় আসছে।
আর জার্মানিতে মূল হ্যামার তৈরি সম্পন্ন হওয়ার পথে বলেও খবর এসেছে। সেগুলোও এপ্রিলের শেষের দিকে আসবে বলে আশাবাদ সেতু প্রকল্প কর্মকর্তাদের।
সেতু প্রকল্পের আরেকজন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানান, পহেলা মার্চ থেকে টেস্ট পাইল বসানো শুরু হবে তার জন্যই এখন পদ্মার তীরে মোবিলাইজেশন ও প্রস্তুতির কাজ চলছে। আর মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত আড়াইশ মিটার প্রশস্ত ড্রেজিং চলছে।
এদিকে, শুক্রবার দিনভর প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে সরেজমিন পরিদর্শন করেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলে প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ও এ দলের সদস্য অধ্যাপক আইনুন নিশাতসহ ছয় জন।
পরিদর্শন শেষে অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘যা দেখলাম তাতে মনে হলো সময়মতো এগুচ্ছে কাজ। ৫টি প্যাকেজের মধ্যে ৩টির কাজ বলা যায় অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ’
তিনি জানান, সংযোগ সড়ক, সার্ভিস এরিয়া, কনসালট্যান্টের অফিস, ল্যাবরেটরি এগুলোর কাজ প্রায় শেষ। জাজিরা অংশের সাড়ে ১০ কিলোমিটার রাস্তা, সার্ভিস এরিয়ার কাজ এগিয়ে গেছে যা সময়মতো শেষ হবে।
মূল সেতুর কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত চায়না মেজর ব্রিজের দু’জন উর্ধ্বতন প্রকৌশলীর সঙ্গেও শুক্রবার বৈঠক করেন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যরা।
বিষয়টি জানিয়ে জামিলুর রেজা বলেন, ‘মেজর ব্রিজ প্রকৌশলীরা আমাদের জানিয়েছেন, টেস্ট পাইলের হ্যামার শনিবারই মাওয়ায় এসে পৌঁছে যাবে। আর মূল পাইলের যে হ্যামার জার্মানিতে বানানো হচ্ছে তার অগ্রগতিরও সচিত্র বর্ণনা দিয়েছেন প্রকৌশলীরা।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১৮ সালে পদ্মাসেতু দিয়ে পার হবে যানবাহন। এর সরাসরি সুবিধা পাবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার কোটি কোটি মানুষ।
দুই তলা অবকাঠামোর এই পদ্মা সেতু থাকবে রেললাইনও। এখন পর্যন্ত সেতুর কাজে খরচ হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। প্রায় সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এ-সেতু নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৫