জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: অবৈধভাবে বা আইনভঙ্গ করে কেউ বিতর্কিত মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা পরিচালনা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংসদে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, এমএলএম কোম্পানিগুলো পুনরায় যাতে সক্রিয় হয়ে জনগণকে প্রতারিত করতে না পারে সে লক্ষ্যে সরকার তিনটি পৃথক আইন প্রণয়ন করেছে।
মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা জানান।
মন্ত্রী জানান, এমএলএম ব্যবসা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সরকার মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এবং মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৪ ও সংশোধিত বিধিমালা, ২০১৪ প্রণয়ণ করেছে।
তিনি জানান, এমএলএম আইন, ২০১৩ অনুসারে আইন অমান্য করে এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনূর্ধ্ব ১০ বছর এবং অনূন্য ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে বা আইনভঙ্গ করে কেউ এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করলে উক্ত আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
তোফায়েল আহমেদ আরও জানান, বর্তমানে এমএলএম ব্যবসার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৫টি কোম্পানির মধ্যে একটি কোম্পানি (জার ইলেকট্টনিক্স পালস লিমিটেড) আইনানুগভাবে ব্যবসা পরিচালনা না করার কারণে এর লাইসেন্স বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাতিল করা হয়েছে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানিসমূহের সার্বিক কার্যক্রম তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদান করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি কর্তৃক একটি সংসদীয় সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংসদীয় সাব-কমিটি কর্তৃক ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে দুটি শুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। সংসদীয় সাব-কমিটির প্রতিবেদন প্রাপ্তিসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
শেখ মো. নুরুল হকের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পরপরই ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন সরকারের একমাত্র এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের অধিকাংশ পণ্য দ্রব্যের আমদানি ও রফতানি টিসিবি’র মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হতো। তবে আশির দশকে মুক্ত বাজার অর্থনীতি বিকাশের পর হতে বেসরকারি ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশ ঘটতে থাকে। তখন থেকে টিসিবি জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও বাজারজাত করে থাকে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ হতে বিভিন্ন দেশে ৭২৯টি পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। গত অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৪ সালে রফতানি খাতে মোট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ কোটি এবং আমদানি খাতে ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা।
দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ জানান, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানির পরিমাণ ৪ হাজার ৭৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পূর্ববর্তী অর্থবছরে ছিল ৪ হাজার ৭৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমদানির পরিমাণ পূর্ববর্তী অর্থবছরের চেয়ে শতকরা একভাগ হ্রাস পেয়েছে।
তিনি জানান, ওই অর্থবছরে বাংলাদেশ হতে ৫৬৩ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ভারতে রফতানি করা হয়েছে এবং ভারত হতে ৪ হাজার ৭৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে। পূর্ববর্তী বছরের অপেক্ষা ভারতে রফতানির পরিমাণ ১৩ ভাগ বেশি হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫