ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

যেকোনো উপায়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ চায় ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৫
যেকোনো উপায়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ চায় ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: চলমান রাজনৈতিক সহিংস কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ হচ্ছে।

আর তাই দেশে পরিকল্পিত উপায়ে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে, তা যে কোনো উপায়ে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল।

সর্ব ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তারা এ মত দেন।

বেলজিয়ামের একটি কূটনৈতিক সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার (০৪ মার্চ) সর্ব ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটায় ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে এই প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের পক্ষে ছিলেন- চেয়ার অব ডেলিগেটস ফর সাউথ এশিয়ান কান্ট্রিজ জিন ল্যাম্বার্ট ও পলিটিক্যাল আর্জেন্ট সল্যুশন আডভাইজার সাবিনা মায়া।

ল্যাম্বার্ট এর আগে একাধিকবার ঢাকা সফর করেছেন।

সর্বশেষ, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফর করেন তিনি। সে সময় তিনি বলেন, এখনই নতুন নির্বাচন নয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ করা প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও বিএনপি-জামায়াতের মানুষ হত্যার কর্মসূচি, নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সহিংসতার চিত্র, পেট্রোল-বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারাসহ নানা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচিকে ‘বর্বর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’বলে উল্লেখ করেন তারা। সম্প্রতি, ফাঁস হওয়া বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার কথোপথন যেখানে মান্না রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদের লাশ চেয়েছেন বিষয়টিও জানানো হয়।

এ সময় ১০ ট্রাক অস্ত্র ও গ্রেনেড হামলার বিষয়েও ইইউ পার্লামেন্টকে অবহিত করা হয়।  

বেলজিয়াম আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, দেশে চলমান এই সন্ত্রাস রাজনৈতিক দলের ইঙ্গিতে এবং উস্কানিতে হচ্ছে বলে মনে করেন ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট সদস্যরা।

বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের নেতা মাহমুদ সুলতান শরীফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, জীবন-যাপন বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের সে চেষ্টা সফল না হলেও মানুষ এ সব থেকে মুক্তি চায় বলে আমরা ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট সদস্যদের জানিয়েছি।

সহিংসতা বন্ধ না হলে আলোচনার কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হয় না বলেও জানান তারা।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গত ৫ জানুয়ারির আগে ও পরের বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সচিত্র প্রামাণ্য দলিল ল্যাম্বার্টদের হাতে দেওয়া হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জিয়াউর রহমানের সময়ের সামরিক বাহিনীর হাজারও মানুষ হত্যা, জামায়াতের ইন্ধনে ১৯৭১ সালে লাখ লাখ মানুষ হত্যার কথাও জানানো হয় ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট সদস্যদের।

এ ছাড়া বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিরা।

এদিকে, কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষকে বোমা মেরে পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখে শঙ্কিত ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট সদস্যরা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সহিংসতায় সহিংসতায় ৮৫ জন নিহত, এক হাজার তিনশ ২০ জন আহত ও ৫১ জনকে পুড়িয়ে মেরেছে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা।

এ ছাড়াও চারশ ৫৪টি গাড়ি ভাঙচুর, পাঁচশ ৭০টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। আটটি জলযানে হামলা করা হয়।  

জানা যায়, ইউরোপীয়ান প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সরকারের কর্মসূচি নিয়ে জানতে চায়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১৩-তে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সন্ত্রাসের মাধ্যমে শিশু থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হত্যা, ধর্ষণ ও দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সংবিধান মোতাবেক হয়েছে। অথচ বিএনপি-জামায়াত দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে দেশকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চাইছে।

গত জোট সরকারের সময়ে দেশে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করিয়ে দেশের মধ্যে আল-কায়েদা ও আইএস-এর নির্দেশে সন্ত্রাস চালিয়েছে। এমনকি গার্মেন্টস সেক্টরকে ধ্বংস করে অর্থনীতিকে শেষ করার চেষ্টায় রয়েছে। তাই, সরকারের কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

বৈঠকে বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রশীদ বুলুর নেতৃত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ গ্রেটব্রিটেন আওয়ামী লীগের সভাপতি, মাহমুদ সুলতান শরীফ, সর্ব ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, প্রকৌশলী হাসনাত মিয়া, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন পলিন, আব্দুস সালাম ও ড. আব্দুল কুদ্দুস উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) এক বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে। সেখানে বাংলাদেশের বৈদেশিক সহায়তা নিয়ন্ত্রণের নতুন আইন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বিচার বহির্ভূত হত্যা, রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ বেশ কিছু বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসা ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট সদস্য থমাস নিকলেসন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান চলমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন।

সংখ্যালঘুর ওপর হামলা, রাজনৈতিক সহিংসতা, রাজনৈতিক নেতাসহ সাধারণ গণগ্রেফতার এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে সংলাপের অনীহা ও অনাগ্রহের মতো ঘটনা ঘটছে।

এ ঘটনার পর পরই ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন।

এর আগে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামী পরিত্যাগের বিষয়ে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়, আগের সে অবস্থানে থেকে এখনও ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট অনড় রয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ডিসেম্বরে ঢাকায় আসা ল্যাম্বার্ট।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।