বকশীগঞ্জ (জামালপুর) থেকে: জামালপুর সীমান্তে বর্বরভাবে হত্যা করা হাতি দুটোকে মারার পেছনে পূর্ব পরিকল্পনা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ হত্যাকাণ্ডে গ্রামবাসী অংশ নেয়নি।
শেরপুর অঞ্চলের সহকারী বন কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির সদস্য আব্দুল ওদুঁদ ভূইয়া বুধবার বাংলানিউজকে জানান, এভাবে নৃশংসভাবে হাতি হত্যার পেছনে পূর্বপরিকল্পনা থাকতে পারে।
বুধবার দুপুরে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যেভাবে অঙ্গগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে পূর্বপরিকল্পিতভাবেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
তিনি বলেন, বাঘারচর বিজিবি ফাঁড়ি, ডাংঝড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। যেভাবে বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদ দিয়ে হাতিগুলোকে হত্যা করা হয়েছে সেটা পরিকল্পিত।
তিনি বলেন, আমি পুলিশকে অনুরোধ করেছি, কেটে ফেলা অঙ্গগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে। কারণ একেবারে গোড়া থেকে কাটা হয়েছে হাতির শুঁড় ও দাঁত।
তিনি বলেন, কারা হাতিকে হত্যা করেছে এবং ফাঁদ পেতেছে সে বিষয়ে গ্রামবাসী এখন একেবারেই চুপ। আমি যাকেই জিজ্ঞাসা করেছি, তিনিই বলেছেন, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। সবাই বলছেন, পরের দিন সকালে তারা জানতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জানা গেছে, ঘটনার জড়িত কয়েকজনের নাম। হাতি হত্যার সঙ্গে পুরো গ্রামের মানুষ জড়িত নয়।
ওদুদ ভূঁইয়া জানান, এই মৌসুমে পাহাড় থেকে হাতি নেমে আসে। মূলত ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়গুলোতে খাবারের সংকটের কারণে এদিকে চলে আসে তারা। খাবারের বিষয়ে হাতি খুব উৎসুক প্রাণী। শস্যাদি খাওয়ার জন্যেই তারা এখানে আসে।
তিনি বলেন, গ্রামবাসীকেও হাতি তাড়ানোতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যেহেতু হাতি আসছে, দল বেঁধে কিভাবে পাহারা দিয়ে হাতিকে সরিয়ে দেয়া যায়, সেটার দলগত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
তবে শনিবার দিবাগত রাতে গ্রাম পর্যন্ত আসতে পারেনি হাতিরা। এর আগেই দুর্বৃত্তদের ফাঁদে খুন হয় তারা।
তিনি আরো বলেন, শেরপুর থেকে জামালপুরের বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকাতেই হাতির প্রভাব রয়েছে। ভারত থেকে সন্ধ্যার সময় সীমান্তের কিছু দরজা খুলে দেয়া হয়। এবং হাতিগুলো খাবারের খোঁজে সমতলে নেমে আসে। এ বিষয়টি নিয়ে দু-দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
জামালপুর পুলিশ সুপার নিজামউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামবাসী সবাই এ হত্যায় জড়িত নয়। আটককৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে ৭ থেকে ৮ জনের নাম পাওয়া গেছে, যারা ফাঁদটি তৈরি করেছিল। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও, এখন দোষীদেরই খুজেঁ বের করবে পুলিশ। আতংকের কিছু নেই।
তবে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে কিনা সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ এ অঞ্চলে এটিই এ ধরনের প্রথম হত্যাকাণ্ড।
ভারতের সীমান্তবাহিনী বিকেলে কিছু গেট খুলে দেয়ার কারণেই হাতি বাংলাদেশের লোকালয়ে প্রবেশ করছে বলেও জানান তিনি।
শেরপুরের বণ্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এই সীমান্তে হাতি তাড়ানোর জন্যে বাংলাদেশ বনবিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থা আইইউসিএন যৌথভাবে এলাকাবাসীকে নিয়ে ২১টি কমিটি গঠন করেছে। যাদের হাতি তাড়ানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এবং হাতি তাড়ানোর জন্যে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বাতি, আগুন জ্বালানোর জন্যে কেরোসিন দেয়া হয়। তবে মাখনের চরে কোন কমিটি নেই বলে জানান তিনি।
দেওয়ানগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হাতির দাঁত বা হাড়ের পাচার হয় সাধারণত চীনে। কিন্তু এখানে এটি প্রথমবার ঘটেছে, তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
এদিকে হাতির ময়নাদতদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে হাতির শুঁড়, দাঁত এবং স্তন কাটার বিবরণ। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ভেটেরেনারি সার্জন ডা. আশরাফুল আলম। বুধবার দুপুরে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ময়না তদন্তে নৃশংসতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, শক্তিশালী ধারালো কিছু দিয়ে দুটো হাতিরই গোড়া থেকে শুঁড় কেটে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কেটে নেয়া হয়েছে বাম কান। আর দুটো হাতিরই দাঁত কেটে নেয়া হয়েছে একেবারে গোড়া থেকে। এসব জায়গা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়াতে হাতি দুটোর খুব দ্রুতই নির্মম মৃত্যু হয়।
এছাড়াও একেবারে গোড়া থেকে কেটে নেয়া হয়েছে লেজ। বিচ্ছিন্ন অংশ নিয়ে যায় দৃষ্কৃতকারীরা।
ডা. আশরাফুল বলেন, হাতি দুটোর শরীরের যেসব অংশ থেকে অঙ্গ কাটা হয়েছে, সেটা দেখে বলা যাবে না, আনাড়ি লোক শুঁড়, লোজ, দাঁত কেটেছে।
এরই মধ্যে ঘটনার পরের দিন সকালে রোববার বেল্লাল নামে এক মাঝিকে আটক করেছে পুলিশ। বেল্লালের নৌকাতেই রাখা হয়েছিল জেনারেটর। ফাঁদের তারে ২২০ ভোল্টের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে মারা হয় হাতি দুটিকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৫
এমএন/জেডএম
** ময়নাতদন্তে বর্বরতার চিহ্ন
** হাতি তাড়ানোর প্রশিক্ষণ নেই মাখনেরচরবাসীর