শীতের আমেজ শুরু হতেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছে বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও আশা করছেন এ মৌসুমে সারা বছরের মন্দার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার।
রাজশাহী থেকে বান্দরবানের মেঘলা ভ্রমণে আসা আসলাম বলেন, আমরা পরিবারের সব সদস্য নিয়ে মেঘলা ঘুরতে এলাম। প্রতিবছরই বান্দরবান বেড়াতে আসি, বান্দরবান আমাদের খুবই ভালো লাগে।
ঢাকা থেকে বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্র নীলাচলে বেড়াতে আসা পর্যটক নুরজাহান জানান, আমার বান্দরবান খুবই পছন্দীয় একটি পর্যটনস্পট। ঈদ, পূজা বা যেকোন বন্ধ পেলেই আমিই এখানে ছুটে চলে আসি।
পর্যটক নুরজাহান আরো বলেন, বান্দরবান আসতে কোনো সময়ের প্রয়োজন হয় না। বছরের সব সময় বান্দরবানের প্রাকৃকিত সৌর্ন্দয পর্যটকদের বিমোহিত করে। এই জেলার নদী, পাহাড়, বন-বনানী আর বন্য পশু-পাখির কলকলানিতে পর্যটকদের মন ভরে যায়। শুক্র ও শনিবার বন্ধ আর এর মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় দিবসের বন্ধ থাকায় বান্দরবানে বেড়াতে এলাম।
এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারেও শীত মৌসুমে পর্যটদের আরো ভালো সেবা প্রদান ও বেশি পর্যটক জেলায় আগমন ঘটবে এবং ব্যবসা ভালো হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছে পর্যটন সংশিষ্টরা।
বান্দরবানের মেঘলায়ে অবস্থিত হলিডে ইন রিসোর্টের মালিক জাকির বলেন, বান্দরবানের পর্যটকদের অবকাশ যাপনের জন্য দিন দিন বিভিন্ন হোটেল মোটেল তৈরি হচ্ছে। পর্যটকদের আরো বেশি সেবা দেওয়ার লক্ষে এই পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন পর্যটন মোটেল, রিসোর্ট ও ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীদের তৈরি বিভিন্ন মাচা ঘর নির্মাণ হচ্ছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে এই জেলার ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত আন্তরিক।
বান্দরবান হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ বলেন, আমরা বান্দরবানের প্রতিটি হোটেল মোটেলকে প্রায় সময় সুন্দর করে সাজিয়ে রাখি, যাতে পর্যটকদের কোনো কষ্ট না হয়। এ জেলার হোটেল-মোটেলগুলো খুব ভালো মানের এবং দামেও সাশ্রয়। আমরা চাই সারা বছরই পর্যটকেরা বান্দরবান আসুক আর আমাদের সেবা গ্রহণ করুক।
এদিকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন। বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক সুহৃদ চাকমা জানান, বান্দরবানে প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটকের বিচরণ ঘটে। কিছু পর্যটক সারাদিন বান্দরবান ভ্রমণ করে আবার নিজ গন্তব্যে চলে যায়, আর কিছু পর্যটক বান্দরবানে দুই তিন দিন অবস্থান করে ও বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ করে। আমরা বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বত্র কাজ করে যাচ্ছি। মেঘলা, নীলাচল, স্বর্ণমন্দিরসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে আমাদের টহল টিম দায়িত্বে থাকে যাতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়।
বৈচিত্র্যময় পাহাড়, টিলা আর ঝর্নার সমাহার মিলিয়ে অর্ধ শতাধিক পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে এ জেলায়, আর প্র্রতি বছর প্রায় ২ লাখ পর্যটকের সমাগম হয় বান্দরবানে।
বান্দরবান ভ্রমণে এখন আর বেশি বেগ পেতে হয় না। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে দিনে-রাতে বিভিন্ন কোম্পানির এসি-নন এসি বান্দরবানে আসা-যাওয়া করে। ভাড়া নন এসি ৬২০ টাকা, আর এসি ১২০০-১৫০০ টাকা।
এছাড়াও ট্রেনে অথবা প্লেনে করে চট্টগ্রাম আসা যায়। চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট থেকে পূরবী বা পূর্বাণী বাসে বান্দরবানে আসা যায়। পূরবী ও পূর্বাণী বাস দুটি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলাচল করে এবং বাসভাড়া ক্লোজডোর ১৩০টাকা আর নন ক্লোজডোর ভাড়া ১১০টাকা। এছাড়াও চট্টগ্রামের কদমতলী থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বান্দরবানে এসি বাস চলাচল করে, ভাড়া ১৫০টাকা।
বান্দরবানের প্রবেশমুখ রেইচা চেকপোস্টে বিদেশি নাগরিকদের অবশ্যই পাসপোর্ট এবং ভিসা দেখিয়ে নাম এন্টি করে বান্দরবান ভ্রমণ করতে হয় এবং ভ্রমণ শেষে আবার ফেরত যাওয়ায় সময় রেইচা চেকপোস্টে জানিয়ে যেতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
এসএইচ