বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় অজ্ঞানতাবশত কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীনতাবিরোধীর নাম বাদ পড়তে পারে কিন্তু রাজাকারের তালিকায় কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবারের কারও নাম যুক্ত হওয়া শুধু ভুল নয় বরং গুরুতর অপরাধ।
এ ধরনের অপরাধের জন্য কারা দায়ী তা তদন্ত করার জন্য বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান দেশের খ্যাতনামা এই লেখক ও সাংবাদিক।
লিখিত বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা সব সময় বলেছি, বাংলাদেশে অধিকাংশ সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতায় ছিল স্বাধীনতাবিরোধী, গণহত্যাকারী এবং তাদের দোসররা। ক্ষমতায় থাকার সুবাদে মুক্তিযুদ্ধের বহু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তারা নষ্ট অথবা বিকৃত করেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে এখনো তাদের অনুসারীদের হটানো যায়নি। যে কারণে আমাদের দাবি ছিল, রাজাকারদের তালিকা প্রণয়ন, বধ্যভূমি শনাক্তকরণ কিংবা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক কাজের দায়িত্ব আমলাদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের যুক্ত করা উচিত। আমরা আশা করবো, আমাদের প্রস্তাবিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন এ বিষয়েও তাদের বক্তব্য প্রদান করবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের পূর্বেই মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রণয়ন সম্পন্ন করা প্রয়োজন। স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রণয়ন সহজ করার জন্য আমরা প্রস্তাব করছি ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন অপরাধের প্রমাণ না থাকার কারণে ১৯৭৩ সালে যারা সাধারণ ক্ষমার যোগ্য বিবেচিত হয়েছিল তাদের এই তালিকা থেকে বাদ রাখা যেতে পারে। তবে সে সময় আত্মগোপনে কিংবা দেশের বাইরে থাকায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীনতাবিরোধী ও গণহত্যাকারীদের গ্রেফতার করা যায়নি, তাদের নাম অবশ্যই তালিকায় থাকতে হবে। তালিকায় অপরাধীদের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানাসহ তারা কোন ঘাতক সংগঠনের সদস্য ছিল তার উল্লেখ এবং অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিবরণও থাকা প্রয়োজন।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, রাজাকারের তালিকা স্থগিত করার পরও উচ্চমহল এ বিষয়ে যেসব কথা বলছেন, তা অনভিপ্রেত। আমার মনে হয় যারা এই তালিকা করেছেন তারা এখনো এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারেননি। রাজাকারের তালিকা শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিকভাবে করা সম্ভব নয়, সিভিল সমাজের সঙ্গে কাজ করতে হবে। আর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় একের পর এক যেভাবে অনিময় করে যাচ্ছে তা খুব সহজে মেনে নেওয়া যায় না। প্রয়োজনে এই তালিকা ধাপে ধাপে করা হোক, তবু তা যেন নির্ভুল হয়। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ইতাহাস বিষয়ক স্থানীয় বিভিন্ন বই থেকেও এ বিষয়ে অনেক তথ্য জানার আছে। সেসময়ের গেজেটগুলো থেকে রাজাকারের তালিকা পাবার জায়গা আছে। সেগুলো এই কাজকে আরও সহজতর করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি নাসরিন চৌধুরী, রাজাকারের তালিকায় নাম আসা মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের কন্যা জুলফিয়া বেগম বুলু, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মির্জার কন্যা সেলিনা মির্জা মুক্তিসহ কমিটির অন্য সদস্য এবং বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত এই রাজাকারের তালিকায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম আসলে সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
এইচএমএস/এইচএডি/