পানির অভাবে নিজেদের জমি চাষ করতে পারছে না রামপুর, গোবিন্দপুর, আওরা মজলিসপুর, লামাপইলসহ আশপাশের সাত গ্রামের হাজারো কৃষক। ফলে প্রতিবছর অন্তত ৫০ হাজার মণ ধান উৎপাদন হলেও এবার তা হয়ে উঠছে না।
স্থানীয়রা জানান, হবিগঞ্জ শহর লাগোয়া রামপুর গ্রামের ইংল্যান্ড প্রবাসী জয়নাল আবেদীন সালেক দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তি মালিকানায় ওই হাওরে সেচ প্রকল্প চালিয়ে আসছিলেন। আমেরিকা প্রবাসী তার ভাই শাহীন মিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এ বছর পিডিবির বকেয়া বিদ্যুৎ বিল প্রায় ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। ফলে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ, বন্ধ সেচ প্রকল্প। আর প্রভাবশালী দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের মাশুল গুণতে হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের। অনাবাদী পড়ে আছে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমি। কর্মসংস্থান হারিয়েছে হাজারো শ্রমিক, বেকার অসংখ্য যুবক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার চার উপজেলাজুড়ে বিস্তৃৃত ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওর। এর মধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা অংশের কৃষকরা চাষ করেন তিন হাজার বিঘা জমি। এখান থেকে প্রতি বছর উৎপাদন হয় অন্তত ৫০ হাজার মণ ধান। এ বছর উল্লেখিত দুই প্রভাবশালীর দ্বন্দ্বে সেচ প্রকল্প বন্ধ থাকায় বেরো ধান চাষাবাদের সময় প্রায় পেরিয়ে গেলেও মাঠে নামতে পারেনি কৃষকরা। গরু দিয়ে বানাতে হচ্ছে অর্থ বীজতলা।
প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না সাধারণ কৃষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক জানান, ১০ বিঘা জমি বর্গা এনেছি। যা চাষ করার জন্য বীজতলাও তৈরি করেছি। কিন্তু সেচ প্রকল্প বন্ধ থাকায় এবার আর চাষ হবে না। যে কারণে সারা বছর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কীভাবে খাবেন সেই চিন্তা করছেন তিনি।
আরেক কৃষক জানান, ২৬ বিঘা জমির জন্য তিনি বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু চাষ না হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিশেহারা। শুধু এই দু’জনই নন, এ ঘটনার ভুক্তভোগী হাজারো কৃষক। জমি চাষ করতে না পারায় অনেককেই না খেয়ে মরতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য টেনু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জন্য সাত গ্রামের মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। পাশাপাশি মারা যাবে কৃষকদের গবাদিপশুও। ঘর-বাড়িতে হামলা ও মিথ্যা মামলার ভয়ে মুখ খুলছে না নিরীহ লোকজন। এ ব্যাপারে ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
তেঘরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনু মিয়া বলেন, ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে আমি এলাকার লোকজনকে ডেকে এনেছি। কিন্তু সেচ প্রকল্প লিজ আনার জন্য কেউ সম্মত হননি। ২৯ বছর ধরে একজন এই প্রকল্পে লিজ আনেন। এই নিয়ে এলাকার লোকজনের মধ্যে লেগেই আছে ঝগড়া-বিবাদ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এই নিয়ে অবগত রয়েছেন। দুই প্রভাবশালীর একজন শাহীন মিয়াকে লাঠিয়াল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার বলেন, জয়নাল আবেদীনের দু’টি সেচ সংযোগ রয়েছে। তার প্রায় ১৩ লাখ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। নোটিশ দেওয়ার পর তিনি বিলের একটি অভিযোগ দেন। পরে অভিযুক্তের বাইরের বিলগুলো পরিশোধের কথা বললে তিনি তা করেননি। যে কারণে ওই এলাকায় সেচ সংযোগ চালু হয়নি।
হবিগঞ্জ বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল হক বলেন, প্রকল্পটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় তারা কিছু করতে পারছেন না। তবে সেচ কমিটির সিদ্ধান্ত পেলে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০
এএটি