ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হবিগঞ্জে ঘুড়ি ও পিঠা উৎসবে বসন্ত বরণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২০
হবিগঞ্জে ঘুড়ি ও পিঠা উৎসবে বসন্ত বরণ

হবিগঞ্জ: তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আধুনিক বিনোদন আর ইট-কাঠ-পাথরের শহুরে জীবনে নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতির কথা যেন ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্ম। বাংলার উল্লেখযোগ্য দুই ঐতিহ্য হলো- ঘুড়ি ওড়ানো আর দেশি পিঠা তৈরি। সেই ঐতিহ্য ধারণ করার লক্ষ্যেই হবিগঞ্জে বসন্তরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ঘুড়ি আর পিঠা উৎসব দিয়ে। পাশাপাশি ছিল শিশুদের চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতাও। 

শনিবার (৭ মার্চ) হবিগঞ্জ জেলা শহরের জালাল স্টেডিয়ামে এ বসন্ত বরণের আয়োজন করে সামাজিক সংগঠন 'দুই শূন্য শূন্য ছয়'।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির।

এছাড়াও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. মিজানুর রহমানসহ নানা শ্রেণী-পেশার প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এ আয়োজন উপভোগ করেন।  

হবিগঞ্জে ঘুড়ি ও পিঠা উৎসবে বসন্ত বরণ।                                          ছবি- বাংলানিউজ

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসন্ত বরণ ঘিরে শিশু, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে  জালাল স্টেডিয়াম। হরেক রঙ ও আকারের ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত অনেকেই। কেউ বাড়ি থেকে বানিয়ে এনেছেন ঘুড়ি, কেউবা মাঠেই কিনছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন রকমের পিঠা নিয়ে স্টেডিয়ামের এক দিকে বসেছে কতক স্টল। সেগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের লক্ষ্যণীয় ভিড়।  

সারাদিন আনন্দে উৎসবে কেটে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশে উড়তে থাকে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। সন্ধ্যয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।  

হবিগঞ্জে ঘুড়ি ও পিঠা উৎসবে বসন্ত বরণ।  ছবি- বাংলানিউজ

উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষিকা শাহনাজ ইয়াসমিন জানান, তিনি তার দুই সন্তান সিয়াম ও সোহাকে নিয়ে এসেছেন। বাচ্চারা ঘুড়ি ওড়াবে। এখানে এসে বিভিন্ন ধরনের পিঠাও খেয়েছেন তারা। এখানে আসতে পেরে তার দুই সন্তান আনন্দিত।

পুলিশ সদস্য ফরিদ আহমদ বলেন, হবিগঞ্জ শহরে খেলাধুলার জন্য আধুনিক স্টেডিয়াম থাকলেও বিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকটা বন্দির মতো লাগে। ঘুড়ি উৎসবের খবর পেয়ে একটু প্রশান্তির আশায় জালাল স্টেডিয়ামে এসেছি। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধুদের নিয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে অনেক ভালো সময় কেটেছে। এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখতে আয়োজকদের অনুরোধ জানান তিনি।  

হবিগঞ্জে ঘুড়ি ও পিঠা উৎসবে বসন্ত বরণ।  ছবি- বাংলানিউজ

ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের উদ্যোক্তা সংগঠন 'দুই শূন্য শূন্য ছয়'র সাবেক সভাপতি সাংবাদিক সাইফ আহছান বাংলানিউজকে বলেন,  অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঢাকা থেকে ৭ হাজার টাকার ঘুড়ি কিনে আনা হয়েছে। এছাড়া আয়োজকরা নিজের হাতে তৈরি করেছেন হরেক রকম দেশীয় পিঠা। এগুলো বিক্রি করেই আয়োজনের খরচ মেটানো হচ্ছে।  

তিনি আরো জানান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এখান থেকে সেরা ১৭ জনকে ট্রফি ও সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাইফ।  

হবিগঞ্জে ঘুড়ি ও পিঠা উৎসবে বসন্ত বরণ।  ছবি- বাংলানিউজ

হবিগঞ্জ অক্সব্রিজ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ বলেন, বর্তমান যুগে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন আধুনিক বিনোদনের কারণে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নানা আচার-অনুষ্ঠান হারিয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জন্য অবশ্যই আশীর্বাদ স্বরূপ। তবে এসবের পাশাপাশি নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে 'দুই শূন্য শূন্য ছয়'র মতো অন্য সামাজিক সংগঠনগুলোও যেন এরকম আয়োজন করে সে অনুরোধ জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
বিএ/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।